বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর অবদান বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তাই বিসিএস, ব্যাংক জব, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সহ সকল সরকারি জব পরীক্ষায় এই টপিক থেকে প্রায়ই প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়ে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: (১৮৩৮-১৮৯৪)
- জন্ম: ২৬ জুন ১৮৩৮
- মৃত্যু: ৮ ই এপ্রিল ১৮৯৪
- জন্মস্থান: পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার কাঁঠালপাড়া গ্রামে।
- ছদ্মনাম: কমলাকান্ত
⇒ বঙ্কিমচন্দ্রের উপাধি ‘ সাহিত্য সম্রাট’। এছাড়াও তাকে ‘ বাংলা উপন্যাসের জনক ‘ বলা হয়।
⇒ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম Graduate.বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পেশায় ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট এবং গ্রাজুয়েট।
⇒ প্রথম কাব্যগ্রন্থ – ললিতা তথা মানস
⇒ বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস – দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫)।
⇒ ইংরেজি ভাষায় রচিত প্রথম উপন্যাস –Rajmohan’s wife (১৮৬৪)
⇒ বাংলার ওয়াল্টার স্কট: তাঁর উপন্যাস সৃষ্টির পশ্চাতে স্যার ওয়াল্টার স্কটের আদর্শের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
⇒ তিনি ‘ বঙ্গদর্শন (১৮৭২)’ পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন |
⇒ তাঁর রচিত প্রবন্ধ ‘ সাম্য ‘ গ্রন্থটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেন।
⇒ তিনি মুসলমান কর্তৃক ‘ সাহিত্য সম্রাট’ ও হিন্দুদের কর্তৃক ‘ ঋষি ’ উপাধি লাভ করেন।
⇒ বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক উপন্যাস – কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬) । উপন্যাসটির নায়ক নবকুমার। বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক বাক্য – ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ? ’ – কপালকুণ্ডলা। এটি কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে বলে।
⇒ বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধগুলো- বিজ্ঞান রহস্য, বিবিধ সমালোচনা, সাম্য, প্রবন্ধ পুস্তক, ধর্মতত্ত্ব, লোকরহস্য।
⇒ ইংরেজি সাহিত্যিক সমালোচক ডি. কুইনসির ‘ Confessions of an English Opium Eater’ অনুকরণে বঙ্কিম ‘ কমলাকান্তের দপ্তর ’ রচনা করেন।
বাংলা উপন্যাসের জনক— বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
১৮৬৫ সালে প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সূচনা করে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী রচনার মাধ্যমে তাঁর মৌলিক প্রতিভা বিকাশের পথের সন্ধান লাভ করেন।
আরও পড়ুনঃ আরও পড়ুনঃ ৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতি : ৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি গাইডলাইন (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর প্রধান সাহিত্য কর্ম
উপন্যাসঃ
বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ২২ বছরের সাহিত্য জীবনে মোট ১৪ টি উপন্যাস রচনা করেন। এগুলো হলঃ
দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫), কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬), মৃণালিনী (১৮৬৯), রজনী ( ১৮৭৭), বিষবৃক্ষ (১৮৭৩), চন্দ্রশেখর ( ১৮৭৫), ইন্দিরা ( ১৮৭৩), যুগলাঙ্গুরীয় (১৮৭৪),রাধারাণী (১৮৭৪), আনন্দমঠ ( ১৮৮২),দেবী চৌধুরাণী ( ১৮৮৪), সীতারাম ( ১৮৮৭), রাজ সিংহ (১৮৮১),কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮)।
⇒ আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী, সীতারাম-বঙ্কিমচন্দ্রের রাজনৈতিক ও দেশাত্মবোধক ত্রয়ী উপন্যাস।
⇒ ইন্দিরা, রাধারাণী ও যুগলাঙ্গুরীয়- বঙ্কিমচন্দ্রের সংক্ষিপ্ত আকারের উপন্যাস।
⇒ রজনী , বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল- বঙ্কিমচন্দ্রের সামাজিক উপন্যাস।
ব্যঙ্গাত্মক ও রসাত্মক প্রবন্ধঃ
লোকরহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, মুচিরাম গুড়ের জীবন চরিত।
দর্শন ও শাস্ত্রবিষয়কঃ
কৃষ্ণচরিত ও ধর্মতত্ত্ব।
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সমালোচনা বিষয়ক:
বিজ্ঞান রহস্য, সাম্য, বিবিধ প্রবন্ধ, বিবিধ সমালোচনা, ধর্মতত্ত্ব অনুশীলন।
৪৭ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে প্রোগ্রামটিতে আজই এনরোল করুন।
দুর্গেশ নন্দিনী
খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষ পর্যায়ে উড়িষ্যার অধিকার নিয়ে মোঘল ও পাঠানদের মধ্যে যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল তা-ই এ উপন্যাসের পটভূমি। উপন্যাসে যুদ্ধ বিগ্রহের কলকোলাহলের স্থান দেওয়া হলেও এতে প্রেমের সূচনা, বিকাশ ও পরিণতির পরিচয় দান করা হয়েছে।
চরিত্র: বিমলা, আয়েশা, জগৎসিংহ ও তিলোত্তমা।দুর্গেশনন্দিনীর অর্থ ‘ দুর্গ প্রধানের কন্যা “।
এ উপন্যাসের প্রতিক্রিয়ায় ইসমাইল হোসেন সিরাজী ‘ রায়নন্দনী’ উপন্যাস লেখেন।
কপালকুণ্ডলা: (অনেকের মতে, বঙ্কিমচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস)
⇒ কপালকুণ্ডলা বঙ্কিমের দ্বিতীয় উপন্যাস। এটি রোমান্স ভঙ্গিতে লেখা হয়। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা
⇒ কপালকুণ্ডলার চরিত্র, কাহিনীর ট্র্যাজিক পরিণতি এই তিনটি কারণে উপন্যাসটি বঙ্কিম চন্দ্রের অন্যতম স্মরণীয় রচনা।
⇒ চরিত্র: কপালকুণ্ডলা, নবকুমার (সপ্তগ্রামনিবাসী যুবক), কাপালিক (যোগসাধক সন্ন্যাসী), মতিবিবি।
⇒ ‘ পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ ’ কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে (বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক ডায়লোগ)
⇒ ‘ তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন? ’
⇒ ‘ প্রদীপ নিভিয়া গেল।’ এছাড়া এই বাক্যটি বিষবৃক্ষ উপন্যাসেও রয়েছে।
মৃণালিনী
ত্রয়োদশ শতাব্দীর বাংলাদেশ ও তুর্কী আক্রমণের ঐতিহাসিক পটভূমিতে রচিত। চরিত্র- হেমচন্দ্র, মৃণালিনী, মনোরমা, পশুপতি।
বুদ্ধদেব বসু এর সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮)
বঙ্কিমচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং সমকালে বিতর্কিত উপন্যাস।
চরিত্র: রোহিনী,গোবিন্দলাল,সূর্যমুখী। [মনে রাখার সূত্র- রোহিনী লালসূর্যে কৃষ্ণ (কাল) হল]
আনন্দমঠ (১৮৮২)
নরেশচন্দ্র সেন গুপ্ত “The Abbey of Bliss’ এবং স্ত্রী অরবিন্দু ‘ Ananda Math ’ নামে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পটভূমিকায় সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ছায়া অবলম্বনে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেছেন। এই গ্রন্থের ‘ বন্দে মাতরম’ গানটি দ্বারা ইংরেজ আন্দোলনের দীক্ষা বুঝিয়েছেন।
চরিত্র- কল্যাণী, ভবানন্দ, মহেন্দ্র সিংহ, ব্রহ্মচারী।
দেবী চৌধুরাণী (১৮৮৪)
দেবী চৌধুরাণী হচ্ছেন রংপুরের পীরগাছার মন্থনার জমিদার যিনি ঐ অঞ্চলের কৃষক বিদোহ, ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলনের নেত্রী। ইংরেজদের সাথে পরাজিত হয়ে নিহত হন। বঙ্কিমচন্দ্র এই অঞ্চলে ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে এই ঘটনা জানতে পারেন এবং দেবী চৌধুরাণী রচনা করেন যা ১৮৮৪ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। চরিত্র- সাগর, ব্রজেশ্বর, প্রফুল্ল, ব্রহ্ম ঠাকুরাণী।
অন্যান্য সাহিত্যকর্মের (উপন্যাস) চরিত্র
⇒ রজনী — শচীন্দ্র, রজনী
⇒ বিষবৃক্ষ —-সূর্যমুখী, নগেন্দ্রনাথ, কুন্দনন্দিনী (৩৩ তম বিসিএসা
⇒ চন্দ্রশেখর— শৈবলিনী, প্রতাপ, চন্দ্রশেখর
⇒ যুগলাঙ্গুরীয়—- পুরন্দর, ধনদাস, অমলা, হিরণ্ময়ী
⇒ রাধারাণী— রাধারাণী, কামাক্ষা বাবু, বসন্তকুমারী
⇒ সীতারাম— সীতারাম
⇒ রাজসিংহ— জেবুন্নেসা। (এটি মূলত নায়িকা প্রধান উপন্যাস।)
মনে রাখুন: সাম্য (প্রবন্ধ) – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সাম্যবাদী (কবিতা)-– কাজী নজরুল ইসলাম।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়ে আজ এই পর্যন্তই। ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিন এবং বেশি বেশি এমসিকিউ পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন।