বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বিসিএস ক্যাডার। আর এই বিসিএস ক্যাডার হতে হলে পাস করতে হয় বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা। তাই লেখাপড়া শেষ করার পর লক্ষ লক্ষ তরুণ বছরের পর বছর বিসিএস প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বিসিএস প্রিলিতে পাস করতে পারে না।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতে পাস করা খুব বেশি কঠিন না। আপনাকে আসলে জানতে হবে কিভাবে পরিকল্পিত ভাবে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করবেন। সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর টেকনিক অনুসরণ করলে আপনি আসন্ন ৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো দানবকে হারাতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ৪৫ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান ২০২৩ (45 BCS Preliminary Question Solution 2023 PDF)
৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি গাইডলাইন (47 BCS Preliminary Preparation)
চলুন দেখে নিই ৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতিতে (47 bcs preparation) কার্যকরী ১৫ টি গাইডলাইন,
১। নিয়মিত প্রস্তুতির জন্য আত্মবিশ্বাসী হতে শিখুন
বিসিএস এক অধ্যবসায়ের নাম। বিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য শুধুমাত্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং বিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য তাদেরই যারা তাদের বিসিএস প্রস্তুতিতে নিয়মিত এবং সিরিয়াস।
যেহেতু বিসিএস হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরীক্ষা তাই এখানে সফল হতে হলে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হচ্ছে ধৈর্য। ধৈর্যের সাথে নিয়মিত প্রস্তুতির জন্য আত্মবিশ্বাসী হতে শিখুন। পরিশ্রম করলে আপনি সফল হবেন এই বিশ্বাস রাখতে চেষ্টা করুন।
২। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য টার্গেট সেট করুন
আপনাকে ২০০ নম্বরই পেতে হবে না। বিসিএস প্রিলি পাসের জন্য ১২০-১৩০ পাওয়ার মত টার্গেট রেখে প্রস্তুতি শুরু করুন।
অন্ধভাবে অন্য কারো পরামর্শ ও কৌশল অনুসরণ করতে যাবেন না৷ সবার পরামর্শ ও কৌশল শুনলেও সেগুলোর মধ্যে যেগুলো আপনার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত শুধু সেগুলোই অনুসরণ করবেন। যাই পড়বেন বেসিক ক্লিয়ার করে পড়বেন। এতে সময় বেশি লাগলেও পরে সুফল পাবেন।
৩। বিসিএস সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতার জায়গা বের করুন
প্রথমেই বিসিএস সিলেবাসটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। সিলেবাস ধরে বিগত প্রশ্নগুলো পড়ে আপনি আপনার স্ট্রং জোন আর উইক জোন বের করুন। স্ট্রং জোনে আরও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উইক জোনকে ফোকাস করুন।
বিসিএস সিলেবাসে এমন অনেক টপিক আছে যা আপনি আগে থেকেই জানেন বা ধারণা আছে। আবার কিছু কিছু বিষয় আপনার জন্য একেবারেই নতুন। এই নতুন বিষয়গুলো থেকে নিজের মতো করে কিছু বিষয় সিলেক্ট করুন আর পড়া শুরু করে দিন।
৪। পড়ার একটি রুটিন তৈরি করুন যা আপনি সহজেই অনুসরণ করতে পারবেন
বেশির ভাগ প্রার্থী বিসিএস প্রস্তুতিতে খুব অবাস্তব রুটিন করে থাকে। মূলত বিসিএস প্রস্তুতিতে এমন একটি পড়ার রুটিন করুন যা আপনি সহজেই অনুসরণ করতে পারবেন। একটি স্মার্ট রুটিন আপনাকে অবাঞ্ছিত ও অগোছালো পড়ার চাপ থেকে রক্ষা করবে।
মনে রাখবেন প্রিলি পরীক্ষা যতটা জ্ঞানের তার চেয়ে বেশি কৌশলের। তাই পরীক্ষার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত পড়াশোনার বাইরে অপ্রয়োজনীয় সকল কাজ বাদ দিন। পড়ার মধ্যে রেগুলারিটি বজায় রাখুন।
৫। বিগত বছরের ‘বিসিএস প্রশ্নব্যাংক’ অ্যানালাইসিস করুন
এই পর্যায়ে এসে সিলেবাসের টপিক ধরে ধরে বিগত বছরের বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্ন গুলো এনালাইসিস করুন এবং আপনি যে টপিক্গুলো পড়ছেন তার থেকে কি ধরণের প্রশ্ন পূর্বের বিসিএসগুলোতে এসেছে তা খেয়াল করুন।
এছাড়া যে কোন একটি প্রকাশনীর বই যা আপনার কাছে সহজ মনে হয় তা বাছাই করে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান করে পুরোপুরি আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন।
৬। প্রথমেই বোর্ড বই গুলো পড়ে শেষ করুন
নতুনরা শুরুতেই একটা ভুল করে তা হলো বিসিএস এর জন্য প্রয়োজনীয় বোর্ড বই গুলো না পড়েই গাইড পড়া শুরু করে। কিন্তু শুরুতেই নবম- দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়,সাধারণ বিজ্ঞান বইগুলো পড়লে তা আপনার প্রিলি প্রিপারেশনের সাথে সাথে রিটেনের জন্যও হেল্প করবে।
বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য , বোর্ড বই গুলো মোটামুটি দেখা হয়ে গেলে যেকোন ভালো একটা প্রকাশনীর এক সেট বই কিনে পড়তে হবে।
৭। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আপনার অধ্যয়ন থেকে ‘কীভাবে নোট করতে হয়’ শিখুন
বিসিএস ক্যাডার হতে হলে দুনিয়ার সব জানতে হবে বা অনেক অনেক বই পড়তে হবে এমন না বরং অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আপনার অধ্যয়ন থেকে কীভাবে নোট করতে হয় তা শিখুন।
পড়ার সময় যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো লাল বা নীল কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করুন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ এমসিকিউ মনে থাকতে চায় না। এগুলো নোট করুন (প্রত্যেক বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা)।
বিগত প্রশ্ন গুলো নিজের মেমরিতে সেট করে ফেলুন। সেটা জব সল্যশন নতুবা বিষয়ভিত্তিক গাইডের প্রতি অধ্যায়ের পেছন থেকে হোক। যেগুলো খুব ভালো পারেন সেগুলো বারবার না পড়ে যে প্রশ্নের উত্তর গুলো ভুলে যান তা লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে বার বার পড়ুন।
৪৭তম বিসিএস এর পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে আমাদের এই প্রোগ্রামে এখনই এনরোল করুন।
৮। কনফিউজিং তথ্যগুলোর আলাদা নোট তৈরি করুন
বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসের কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের কিছু তথ্য মনে রাখা খুবই কঠিন। বিশেষ করে তারিখ এবং সংখ্যা সম্পর্কিত তথ্যগুলো আপনাকে খুব বিভ্রান্ত করতে পারে।
তাই এই বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলি ছোট ছোট নোট করে রাখুন। আপনার পড়ার টেবিলের সামনে বা বেডরুমের দেয়ালে বিভ্রান্তিকর তথ্যের কিছু পৃথক চার্ট, গ্রাফ বা তথ্য-সারণী লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে বার বার রিভিশন দেওয়ার ফলে আপনার কনফিউশন দূর হবে এবং আপনার বিসিএস প্রস্তুতি দৃঢ় হবে।
৯। স্পষ্ট উচ্চারণে শব্দ করে পড়ুন
আপনি যা শিখবেন স্পষ্ট উচ্চারণে শব্দ করে পড়ে শিখবেন। পড়ার সময় কোনো কনফিউশন রাখবেন না। অনেক অনেক বই না পড়ে ভাল মানের অল্প কয়েকটি বই কিনুন। যা পড়বেন তা বার বার রিভাইজ দিন।
১০। পড়ার ফাঁকে অল্প সময় বিরতি দিন
একটানা গধ বাঁধা পড়ার চেয়ে পড়ার ফাঁকে অল্প বিরতি দিয়ে পড়লে অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকে। আপনি ৩০ মিনিট পড়ে ৫/১০ মিনিট মাথা খাটান।কি পড়ছেন তা মনে করার চেষ্টা করুন।এভাবে পড়ার ফাঁকে অল্প সময় বিরতি দিন।
১১। ইংরেজী, গণিত প্রতিদিন প্র্যাকটিস করুন
আপনার নিয়মিত পড়ার রুটিনে ইংরেজি এবং গণিত রাখুন। ইংরেজি ও গণিত ভালো করে প্রিপারেশন নিলে প্রিলির পাশাপাশি রিটেন এক্সামের জন্যও প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যাবে। প্রিলির জন্য সব বিষয় তো পরবেনই তবে কয়েকটা বিষয় এর প্রতি বেশি জোর দিয়ে পড়া উচিৎ। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার এই সব সাবজেক্ট কেন্দ্রিক আপনার বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিতে পারেন।
১২। সংবাদপত্র পড়ার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করুন
দেশ-বিদেশের বর্তমান এবং সর্বাধিক আলোচিত ঘটনা সম্পর্কে আপ-টু-ডেট থাকার জন্য সংবাদপত্রগুলি অপরিহার্য হাতিয়ার। আপনার বিসিএস প্রস্তুতির জন্য আপনাকে প্রতিদিন অন্তত একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি সংবাদপত্র পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে ‘প্রথম আলো’ বা ‘দ্য ডেইলি স্টার’ নিয়মিত রাখতে পারেন। এছাড়া www.priyo.com, www.bdnews24.com বা www.banglanews24.com এর মতো জনপ্রিয় কিছু অনলাইন পোর্টালগুলিও ফলো করতে পারেন।
প্রতিদিন পেপারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে আলোচিত ঘটনা সম্পর্কে ডিটেইলস জানার চেষ্টা করুন (বিশেষ করে সমসাময়িক আর্ন্তজাতিক ইস্যুগুলো) এবং প্রিলিতে আসার মতো অংশটি নোট করুন।
১৩। একটি ‘স্মার্ট-রিভিশন চক্র’ অনুসরণ করুন
একটানা ১৩/১৪ ঘণ্টা পড়লেই বিসিএসের সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। আপনি কতক্ষণ পড়লেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল আপনি কতটুকু পড়া মনে রাখতে পারেন। আপনার মেমরির সর্বোচ্চ আউটপুট পেতে একটি স্মার্ট রিভিশন চক্র অনুসরণ করুন।
রিভিশনের মাধ্যমে নিজের প্রস্তুতি যাচাই করতে নিচের চক্রটি অনুসরণ করুন।
# প্রথম রিভিশন: যে কোনো পড়া মুখস্ত করার পর তা ১ ঘন্টা পর আবার মনে করার চেষ্টা করুন।এক্ষেত্রে প্রতিটি রিভিশনের জন্য মাত্র ৫-৬ মিনিট ব্যয় করুন। # দ্বিতীয় রিভিশন: ২য় রিভিশনটি ঠিক ২৪ ঘন্টা (১ দিন) পরে দিন। ফলে আপনার মুখস্থ তথ্যগুলো আগামী এক সপ্তাহ মনে থাকবে। # তৃতীয় রিভিশন: ৩য় রিভিশন ঠিক ৭ দিন (১ সপ্তাহ) পরে হওয়া উচিত। এতে আপনি আগামী এক মাসের জন্য আপনার বেশিরভাগ তথ্য মনে রাখতে সক্ষম হবেন। # চতুর্থ (চূড়ান্ত) রিভিশন: শেষ রিভিশনটি ঠিক এক মাস পর হতে হবে। ফলে আপনার মুখস্থ তথ্যগুলো আপনার মেমরি সিস্টেমে স্থায়ী হবে।
এভাবে চক্রাকারে রিভিশনের মাধ্যমে আপনার পড়াগুলো দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে।
১৪। বিসিএস প্রস্তুতিতে গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন
গ্রুপ স্টাডি বিসিএস প্রস্তুতির অন্যতম কার্যকরী একটি উপায়। একজন প্রার্থী গ্রুপ-সদস্যদের কাছ থেকে প্রচুর অনুপ্রেরণা এবং প্রয়োজনীয় আপডেট পেতে পারেন। আপনি অনলাইনে ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিতে পারেন। যেমনঃ গ্রুপ স্টাডির জন্য হ্যালো বিসিএস অ্যাপের “আলোচনা” সেকশন ইউজ করতে পারেন।
১৫। যত পারেন বিসিএস মডেল টেস্ট (BCS model test) দিন
আপনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি যাচাই করতে মডেল টেস্টের কোন বিকল্প নেই। আপনি অনলাইন বা অফলাইন যত বেশি মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করতে পারবেন নিজের প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার হলে কিভাবে সময় মেইনটেইন করবেন তা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পাবেন। এছাড়াও বিষয়ভিত্তিক মডেল টেস্টের কোন বিষয়ে আপনার দক্ষতা কেমন সে সম্পর্কেও পূর্ণ ধারণা পাবেন।
এক্ষেত্রে আমাদের হ্যালো বিসিএস অ্যাপে বা হ্যালো বিসিএস ওয়েবসাইট প্রতিদিন লাইভ এক্সাম সহ আরো অনেক এক্সাম আছে। আপনি এই সব এক্সামে অংশগ্রহণ করে সহজেই আপনার প্রস্তুতি যাচাই করতে পারবেন।
সবশেষে, বিসিএস পরীক্ষা মূলত পুরোটাই একটা মানসিক শক্তির খেলা। এখানে টিকে থাকতে জ্ঞানের চেয়ে কৌশল খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, আপনি একবার যদি ভাল্ভাবে বিসিএস প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার অন্যান্য জবের প্রস্তুতিও অনেকটাই গোছানো হয়ে যাবে। সবাই মেধাবী হয়ে জন্ম গ্রহণ করে না। আপনার মেধা যেমনই হোক না কেন,পরিশ্রম ও অধ্যবসায় থাকলে আপনি সফল হবেনই।
পিডিএফ ফরম্যাটে এই আর্টিকেল পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।