বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব বলতে বিখ্যাত পাঁচজন বিখ্যাত কবিকে আখ্যায়িত করা হয়। বিশিষ্ট পাঁচজন কবি যারা রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে বাংলা ভাষার আধুনিক কবিতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তাদেরকে ইতিহাসে বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়। বিসিএস পরীক্ষা বা যেকোনো চাকরি পরীক্ষায় এই বিখ্যাত পাঁচজন কবি থেকে অনেক প্রশ্ন হয়ে থাকে । তাই আজকের আর্টিকেলে এই পাঁচজন কবি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডবঃ পাঁচজন বিখ্যাত কবি
আধুনিক বাংলা কবিতায় অসমান্য অবদান রাখায় যে পাঁচজন কবিকে বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডব বলা হয় তারা হলেনঃ-
- জীবনানন্দ দাশ
- বুদ্ধদেব বসু
- সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
- বিষ্ণু দে
- অমিয় চক্রবর্তী
জীবনানন্দ দাশ ( ১৮৯৯- ১৯৫৪)
- জন্ম: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯
- পিতা: সত্যানন্দ দাশগুপ্ত
- মাতা: বিখ্যাত কবি কুসুমকুমারী দাশ
- মৃত্য ২২ অক্টোবর ১৯৫৪
⇒ জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃতির কবি হিসেবে তিনি পরিচিত।
⇒ জীবনানন্দ দাশ যে সকল নামে পরিচিত: নির্জনতার কবি, রূপসী বাংলার কবি,তিমির হননের কবি ,ধূসরতার কবি,।
⇒ পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত, মাতা বিখ্যাত কবি কুসুমকুমারী দাশ।
⇒ ১৯১৯ সালে ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় তার প্রথম কবিতা ‘বর্ষা আবাহন’ প্রকাশিত হয়।
⇒ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২১ সালে ইংরেজিতে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন।
⇒ ১৯২২ সালে কলকাতার নামধারী সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে অধ্যাপনা করেন।
⇒ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করলে (১৯২৫) তিনি ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ নামে একটি কবিতা লিখেন। এটি ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
⇒ কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ কলকাতার শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে মারা যান।
আরও পড়ুনঃ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত
প্রধান সাহিত্যকর্ম
উপন্যাস
জীবনান্দন দাশ এর মূল্যবান ১৪ টি উপন্যাস রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- মাল্যবান (১৯৭৩),
- সুতীর্থ (১৯৭৪),
- কল্যাণী।
- চারজন
প্রবন্ধগ্রন্থ
কবিতার কথা (১৯৫৬)। এ গ্রন্থের বিখ্যাত উক্তি- ‘সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি’।
কাব্যগ্রন্থ
- ঝরা পালক (১৯২৭) :
- ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬)
- বনলতা সেন(১৯৪২)
- মহাপৃথিবী (১৯৪৪),
- সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)।
কবিতা
- দর্শনা (১৯৭৩),
- আলো পৃথিবী (১৯৮১),
- মনোবিহঙ্গম,
- হে প্রেম,
- তোমারে ভেবে ভেবে (১৯৯৮),
- অপ্রকাশিত একান্ন (১৯৯৯)
- আবছায়া (২০০৪)
- দেশবন্ধুর প্রয়াণে।
- বনলতা সেন : ১৯৪২ সালে এডগার এলেন পো রচিত ‘টু হেলেন’ কবিতার প্রভাব রয়েছে।
- আবার আসিব ফিরে (রূপসী বাংলা),
- বাংলার তীরে
মৃত্যুর পর প্রকাশিত কাব্য
- রূপসী বাংলা (১৯৩৬)
- বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)
১৯৫৪ সালে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১ টি উপন্যাস এবং ১২৬ টি ছোটগল্প রচনা করেন। যা তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।
পুরস্কার
- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি,
- একুশে পদক (১৯৭৬) লাভ করেন।
৫৫ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বুদ্ধদেব বসু: (১৯০৮-১৯৭৪)
- জন্ম: নভেম্বর ৩০, ১৯০৮
- মৃত্যু: মার্চ ১৮, ১৯৭৪
- জন্মস্থান: বুদ্ধদেব বসুর জন্ম কুমিল্লায়।
⇒একজন খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক।রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুকে সব্যসাচী লেখক বলা হয়।
⇒বুদ্ধদেব বসু কবি ছিলেন একাধারে গল্পকার,নাট্যকার, প্রাবন্ধিক,সম্পাদক ,অনুবাদক ও সাহিত্য সমালোচক ।
⇒ ১৯৩৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহযোগিতায় ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন।
⇒ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে থাকা অবস্থায় তিনি “বাসন্তিকা” পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
⇒সম্পাদিত পত্রিকাঃ প্রগতি , কবিতা।
বিস্তারিত পড়ুন এই আর্টিকেলে
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-১৯৬০)
- জন্ম : ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কোলকাতায়।
- মৃত্যু : ১৯৬০ সালের ২৫ জুন।
- উপাধি: ক্ল্যাসিক কবি বলা হয়।
⇒সুধীন্দ্রনাথ কখনো উপন্যাস লেখেননি।
⇒ তাঁর প্রথম কবিতা ‘কুক্কুট’ প্রবাসী পত্রিকায় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
⇒‘উপস্থাপন’ কবিতায় নিজেকে ‘ক্ষণবাদী’ বলে ঘোষণা করেছেন।
⇒কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে জীবনানন্দ দাশ বলেছেন- ‘তিনি আধুনিক বাংলার সবচেয়ে বেশি নিরাশাকোজ্জ্বল চেতনা’।
⇒১৯৪৫ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত দ্যা স্টেটসম্যান পত্রিকায় কাজ করেন
⇒সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্র পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
প্রধান সাহিত্যকর্মঃ
কাব্যগ্রন্থ
- তন্বী : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রীচরণে উৎসর্গ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ঋণ শোধের জন্য, ঋণ স্বীকারের জন্য)
- অর্কেষ্ট্রা (১৯৩৫) – তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রেম কাব্য। এতে ২৫টি কবিতা রয়েছে। এই কাব্যের একটি
- কবিতা ‘শাশ^তী’।
- ত্রন্দসী
- সংবর্ত,
- উত্তর ফাল্গুনী,
- দশমী।
অনুবাদ
- প্রতিধ্বনি।
গদ্যপ্রবন্ধ
- স্বগত,
- কুলায় ও কালপুরুষ,
- আত্মজীবনীর খসড়া।
২৫ জুন ১৯৬০ সালে ৫৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুনঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্য কর্ম
বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২)
- জন্ম : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই কলকাতায়।
- মৃত্যু : ১৯৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর।
- তাকে মার্কসবাদী কবি বলা হয়।
⇒ ১৯২৩ সালে কল্লোল পত্রিকা প্রকাশ করেন।
⇒ কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ হলে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের পরিচয় পত্রিকায় যোগদান করেন এবং সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
প্রধান সাহিত্যকর্মঃ
কাব্যগ্রন্থ
উর্বশী ও আর্টেমিস (১৯৩৩), চোরাবালি (১৯৩৭), সাত ভাই চম্পা, তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ, ইতিহাসের ট্রাজিক উল্লাসে, নাম রেখেছি কোমল গান্ধার, স্মৃতিসত্তা ভবিষ্যত, চিত্ররূপময় পৃথিবী, উত্তরে থাকে মৌন, রবিকরোজ্জ্বল নিজ দেশ, সেই অন্ধকার চাই, দিবানিশি, আমার হৃদয়ে বাঁচো।
অনুবাদ- এলিয়টের কবিতা।
প্রবন্ধ- রুচি ও প্রগতি, সাধারণের রুচি, সাহিত্যের ভবিষ্যৎ, এলোমেলো জীবন ও শিল্প সাহিত্য।
স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ- এই জীবন
সম্পাদিত পত্রিকা- পরিচয়, সাহিত্যপত্র
তার রচিত বইসমূহঃ
- ছড়ানো এই জীবন (আত্মজীবনী)
- উর্বশী ও আর্টেমিস (১৯৩২)
- চোরাবালি (১৯৩৮)
- পূর্বলেখ (১৯৪০)
- রুচি ও প্রগতি (১৯৪৬)
- সাত ভাই চম্পা
- সাহিত্যের ভবিষ্যৎ (১৯৫২)
- সন্দীপের চর (১৯৪৭)
- অন্বিষ্ট (১৯৫০)
- নাম রেখেছি কোমল গান্ধার (১৯৫০)
- তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ (১৯৫৮)
- রবীন্দ্রনাথ ও শিল্প সাহিত্য আধুনিকতার সমস্যা (১৯৬৬)
১৯৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর ৭৩ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১- ১৯৮৬)
- জন্ম: ১০ এপ্রিল, ১৯০১
- জন্মস্থান: পশ্চিমবঙ্গের হুগলির শ্রীরামপুর
- পিতাঃ দ্বিজেশচন্দ্র চক্রবর্তী
- মাতাঃ অনিন্দিতা দেবী
- মৃত্যু ১৯৮৬
⇒ অমিয় চক্রবর্তী ১৯০১ সালের ১০ এপ্রিল মামা বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হুগলির শ্রীরামপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
⇒ অমিয় চক্রবর্তীর মা অনিন্দিতা দেবী ছিলেন সাহিত্যিক। ‘বঙ্গনারী’ শিরোনামে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখতেন।
⇒ শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য সচিব (১৯২৬- ১৯৩৩) ছিলেন।
⇒ তিনি মূলত ত্রিশের দশকের আধুনিক কবি।
⇒ ‘বাংলাদেশ’ কবিতাটি অনিঃশেষ কাব্য গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত,১৯৭১ সালের সংঘটিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত। অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত।
প্রধান সাহিত্যকর্ম
গদ্যরচনা
- চলো যাই (১৯৬২),
- সাম্প্রতিক (১৯৬৩),
- পথ অন্তহীন,
- পুরবাসী।
কাব্যগ্রন্থ
- কবিতাবলী (১৯২৫),
- উপহার (১৯২৭),
- খসড়া (১৯৩৮),
- মাটির দেয়াল,
- অমরাবতী,
- অভিজ্ঞান বসন্ত,
- পারাপার,
- পালাবদল,
- ঘরে ফেরার দিন,
- হারানো অর্কিড,
- অনিঃশেষ,
- পুস্পিত ইমেজ।
পুরস্কারঃ
- ইউনেস্কো (১৯৬০),
- ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ (১৯৭০)
১২ ই জুন ১৯৮৬ সালে ৮৫ বছর বয়সে কলকাতার পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন।
৪৭ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে এনরোল করুন এখনই।
বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব বা পাঁচজন বিখ্যাত কবি নিয়ে আজকে এই পর্যন্তই। বিসিএস সহ সকল চাকরি পরীক্ষায় ভালো প্রস্তুতির জন্য বাংলা কবিদের জীবনী,সাহিত্যকর্ম এইগুলো ভালোভাবে মুখস্থ করা প্রয়োজন। এই আর্টিকেল পাঁচজন কবির জীবনী ও সাহিত্যকর্ম উপস্থাপন করা হয়েছে। যা আপনাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
হেলো বিসিএস এর সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।