বিসিএস এর পূর্ণরূপ হল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। মানুষের সহজাত কিছু চাহিদা থাকে। আমরা কেউ ক্ষমতার পাগল। কেউ সম্মানের পাগল। কেউ উন্নত জীবনযাপনের পাগল। বিসিএস আপনাকে সম্মান, ক্ষমতা, টাকা এবং সামাজিক মর্যাদা এনে দিবে।
কন্যার পিতা-মাতা নিজের কন্যার নিরাপত্তা, উন্নত জীবনযাপনের জন্য বিসিএস ক্যাডার পাত্র খুঁজেন। একজন বিসিএস ক্যাডারের বিয়ের পাত্রীর অভাব হয় না। একটার পরে আরেকটা বিয়ের প্রস্তাব আসে। যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানে থাকে বিশেষ খাতির। প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক সব দিক দিয়ে একজন বিসিএস ক্যাডার সমসাময়িক অন্য কারো থেকে উপরে থাকেন। তাই অনার্স পাশ করার পরেই ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীরা বিসিএস এর পেছনে ছুটেন।
বর্তমানে মেয়েরা ও বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ঘর সংসারের কাজের পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে যুক্ত হচ্ছেন।
সব জায়গায় “বিসিএস” নামক সোনার হরিণ এর জয়জয়কার।
এই “বিসিএস” পরীক্ষা আসলে কি?
কিভাবে বিসিএস পরীক্ষা হয়?
বিসিএস ক্যাডার হবার সুযোগ সুবিধা কি?
এই বিষয়গুলো নিয়ে থাকছে আজকের আর্টিকেল।
বিসিএস কি?
BCS সোজা কথায় একটি পরীক্ষার নাম। এই পরীক্ষায় পাশ করে সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদান করতে হয়।
সিভিল সার্ভিস মানে কি?
সোজা বাংলায় সরকারি চাকরি। প্রতিটি দেশেই সরকারি চাকরি মোটামোটি দুইভাগে বিভক্ত। মিলিটারি আর সিভিল। মিলিটারি বলতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী বুঝায়। সিভিল বলতে প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স, পররাষ্ট্র, অডিট ইত্যাদি বুঝায়।
বিসিএস ক্যাডার মানে কি?
ক্যাডার মানে কোন গুন্ডা মাস্তান নয়।
বরং ক্যাডার হল কোন সুনির্দিষ্ট কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একটি দল। সুনির্দিষ্ট কাজ বলতে সরকারের আদেশ, নিষেধ, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা বুঝায়। সরকারী চাকুরির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে নিয়োগ প্রাপ্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়, তাই এদের সিভিল সার্ভিস BCS Cadre বলা হয়।
একজন বিসিএস ক্যাডার প্রজাতন্ত্রের চাকর। জনতার চাকর। জনতার ভোটে নির্বাচিত সরকারের চাকর।
বিসিএস ক্যাডার মূলতঃ দুই প্রকার। জেনারেল ( পুলিশ, এডমিন, পররাষ্ট্র ইত্যাদি) এবং টেকনিক্যাল ( শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সড়ক ও জনপদ ইত্যাদি)। জেনারেল ক্যাডারে যে কেউ যে কোন সাবজেক্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে চাকুরি করতে পারেন, কিন্তু টেকনিকাল ক্যাডারে চাকুরি করতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা লাগবে। যেমন এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ সরকারী ডাক্তার হয়ে চাকুরি করতে পারবেন না।
একটা কথা বলা প্রয়োজন, ক্যাডার চয়েসের ক্ষেত্রে আপনার যা ভালো লাগে তা ঠিক করুন। কারণ, চাকরিটা আপনি করবেন। আপনার পছন্দের অবশ্যই একটা দাম আছে।
আরো পড়ুনঃ ৪৬ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরিপূর্ণ প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন (46 bcs preparation)
বাংলাদেশে বর্তমানে ২৭ ধরনের ক্যাডার রয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষাটি বিপিএসসি, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরিচালনা করে। এই পরীক্ষা যে শুধুমাত্র বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা সেটি কিন্তুনয়। পুরো বিশ্বে এর মত কঠিন পরীক্ষা বেশি নেই।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পুরো পৃথিবী জুড়ে আলোচিত একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালে ৪০২৪৮ জন শিক্ষার্থী আবেদন করে ছিলেন হার্ভার্ডে। সুযোগ পেয়েছেন ২০৫১ জন। হিসাব করলে দেখা যায় ১টি আসনের জন্য লড়াই করেছেন ১৯ জন শিক্ষার্থী।
অপর দিকে ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করেছেন ৪ লক্ষ ৭৫ হাজারের ও বেশি শিক্ষার্থী। আসন সংখ্যা ২ হাজার। এখানে প্রতি আসনে লড়াই করবেন ২৩৭ জন!
ভাবা যায়?
৪৬ তম বিসিএস প্রস্তুতি নিতে আমাদের এই প্রোগ্রামে এখনই এনরোল করুন।
এত প্রতিযোগিতার পরেও কেন বিসিএস নিয়েশিক্ষার্থীদের এত আগ্রহ? বিসিএস ক্যাডারদের রয়েছেনা নামূখী সুবিধা। যা অন্যান্য চাকরি থেকে বিসিএসকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
১) চাকরির স্থায়ী নিশ্চয়তা আছে। খুব বড় কোন অঘটন না ঘটালে চাকরি যাবেনা। শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে বদলি, বেশি হলে ডিমোশন হয়।
২) চাকরির শুরুতেই ভালো বেতন। একজন ক্যাডারের বেতন শুরু হয় জাতীয় ৯ম গ্রেড বেতন স্কেলে। বেসিক ২২০০০ থেকে শুরু।চাকরির একেবারে প্রথমেই ১১০০ টাকার একটা ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়। আবার যারা টেকনিক্যাল ক্যাডার (ডাক্তার, শিক্ষাইত্যাদি) তারা অতিরিক্ত আরো একটি ইনক্রিমেন্ট পান।
৩) বাচ্চাদের জন্য মাসিক শিক্ষা ভাতা দেয় সরকার। একজন শিশুর জন্য মাসিক ৫০০ টাকা বরাদ্দ থাকে।
৪) বাসস্থান, যোগাযোগ মাধ্যম, টিফিন ভাতা সহ নানা ধরনের ভাতা দেয়া হয়।
৫) যেকোন ক্যাডারের মান সম্মান সমাজের অন্যান্য যেকোন চাকুরিজীবীদের চাইতে বেশি। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় যেকোন অনুষ্ঠানে আলাদা মর্যাদা থাকে।
৬) ৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটি নেয়ার সুযোগ থাকে ক্ষেত্র বিশেষে।
৭) চাকরি শেষে বিশাল মূল্যের পেনশন পাওয়া যায়। পেনশনের টাকা দিয়ে বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যায়।
৮) সর্বোপরি সমাজ, দেশের জন্য সামনে থেকে কাজ করার সুযোগ থাকে।
এই পরীক্ষাটাও বেশ জটিল। ৩ টি ধাপ পার করতে হয় ক্যাডার হওয়ার জন্য।
১ম ধাপঃ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। ১০টি বিষয় থেকে মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। সময় থাকে ২ ঘন্টা। এই পরীক্ষায় শুধু বাছাই করা হয় প্রার্থীদের। প্রিলি পরীক্ষার নম্বর মূল পরীক্ষায় ধরা হয় না। পরীক্ষাটি এমসিকিউ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।
২য় ধাপঃ লিখিত পরীক্ষা। ৯০০ নম্বরের এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গড় পাস নম্বর ৫০%। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইভায় ডাকা হয়।
৩য় ধাপঃ ভাইভা পরীক্ষা। ভাইভায় ২০০ নম্বর থাকে।পাশ নম্বর ৫০%। ভাইভা বোর্ড গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান এবং একজন বোর্ড সদস্য দ্বারা। ভাইভায় একাডমিক পড়াশুনা, দেশ, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা পরীক্ষার মোট নম্বর মিলিয়ে, অর্থাৎ ৯০০+২০০= ১১০০ নম্বরের মধ্যে একজন প্রার্থীযতপাবেন, তার ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) । এই সব পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই বিসিএস সিলেবাস ও মানবন্টন ভালোভাবে জেনে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়। তাছারা আপনি Hello BCS অ্যাপ বাবহার করে বিসিএস প্রস্তুতি ও অন্যান্য চাকরির সকল প্রস্তুতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিপিএসসির সুপারিশ অনুযায়ী BCS ক্যাডারদের নিয়োগ দেয় জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত ভাবে নিয়োগ পাওয়ার আগে প্রত্যেক ক্যাডারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং এনএসআই (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) ভেরিফিকেশন করা হয়। এই ৩ টি পরীক্ষায় উতরে গেলে ক্যাডাররা গেজেটেড ভুক্ত হন।
BCS cadre meaning নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের সাথে ফেসবুক পেজ Hello BCS এ যোগাযোগ করতে পারবেন।
পিডিএফ ফরম্যাটে এই আর্টিকেল পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।