বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা হল বিসিএস পরীক্ষা। ২০২০ সালে ৪১ তম বিসিএস এ আবেদন পড়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার। অন্যদিকে শূন্যপদের ক্যাডার আছে ২ হাজার।
তাহলে এই বিশাল সংখ্যক প্রার্থী থেকে যোগ্য ২ হাজার ক্যাডার কিভাবে বের করবে পিএসসি?
উত্তর বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় মোট ৩ টি ধাপ থাকে।
১। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা
২। লিখিত পরীক্ষা
৩। ভাইভা পরীক্ষা
১ম ধাপ, প্রিলিতে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। মোট ১০ টি বিষয় থাকে। আদতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর কোন কাজে আসে না। মূল ক্যাডার নির্বাচনে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার নম্বর বিবেচনা করা হয়। প্রিলি পরীক্ষা হলো একটা গেটওয়ে। এই পরীক্ষা প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর পরীক্ষা। স্বভাবতই লাখ লাখ শিক্ষার্থীর লিখিত বা ভাইভা পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না। সেক্ষেত্রে কয়েক বছর লেগে যাবে। তাই এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলি পরীক্ষা নেয়া হয়। এই পরীক্ষায় ক্ষেত্রবিশেষে ২০-২৫ হাজার প্রার্থীকে পাশ করানো হয়। যারা প্রিলি পাশ করে শুধু তারাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই প্রিলি সিলেবাস টা দেখে নেয়া যাক।
মনে রাখতে হবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুধুই টিকার পরীক্ষা। এখানে ১৯০ পাওয়া যে কথা নূন্যতম ১২০ পেয়ে পাশ করা ও একই কথা। এই পরীক্ষার নম্বর মূল বিসিএস পরীক্ষায় যোগ হয় না।
প্রথমেই আলোচনা করব বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য কি কি করা যাবে না! (BCS Preliminary Preparation)
১। বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য প্রায় সবাই টেবিলের সামনে একটা মানচিত্র টাঙিয়ে রাখেন। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মানচিত্র মুখস্ত করেন। এই কাজটা করা যাবে না। আপনার অনেক মূল্যবান সময় চলে যাবে এই মানচিত্রের পেছনে। আর এই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আপনার মাথা থেকে অন্য পড়া আউট হয়ে যাবে।
২। কারেন্ট এফেয়ার্স, সমীক্ষা, আদমশুমারি, সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পরেন।
কেন?
বিসিএস এ সাম্প্রতিক থেকে বেশি হলে প্রশ্ন আসে ৪-৫ টি। এই ৫ মার্কস এর জন্য হাজার হাজার সমীক্ষা, হিসাব পড়া কি খুব বুদ্ধিমানের কাজ?
না। এত সমীক্ষা, কারেন্ট এফেয়ার্স পড়ে মনে থাকবে সেই ১-২ টি প্রশ্ন। সেগুলো নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এমনিতেই শিখা হয়ে যায়। তাই প্রতিমাসে আলাদা ২ টি বই মুখস্ত করার চেয়ে কারেন্ট এফেয়ার্স সালতামামি একবার চোখ বুলাতে পারেন। তাও দেখার দরকার হবে না, যদি আপনার নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকে।
৩। বই কিনুন কম, পড়ুন বেশি। বাজারে একেবারে প্রথম সারির প্রায় ১০ টি প্রকাশনী আছে। এখন আপনি কি ১০ সেট বই কিনে পড়াশুনা করবেন?
না। ১০ সেট বই পড়ে মনে রাখা অসম্ভব। আপনার কাছে ৫ বছর সময় নেই। বড়জোর ১ বছর থাকবে। কারো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে ১ বছরই ‘মোর দ্যান এনাফ’ বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য।
৪। পত্রিকা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার কোন দরকার নেই। শুধুমাত্র বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, সম্পাদকীয়, মতামত এগুলো পড়লেই হবে। পাশাপাশি পড়াশুনার জন্য আলাদা পাতা থাকে, সেখানে পড়াশুনার জন্য অনেক পরীক্ষা নেয়া হয়। সেগুলো দিলে উপকার মিলবে।
৫। বিসিএস প্রার্থীরা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেন। ধরেন আপনি গাণিতিক যুক্তি বিষয়ে এমপিথ্রি প্রকাশনীর বই কিনলেন। এখন আপনার বন্ধু আপনার মাথায় ঢুকিয়ে দিল, ওরাকলের গণিত আরো বেশি ভালো। আবার আরেক বন্ধু প্রফেসরস এর পক্ষে।
আপনি চারপাশের এত আওয়াজে নিজেকে নিস্তব্ধ করে ফেলবেন না। বই কিনতেই যদি সময় ব্যয় করে ফেলেন তাহলে পড়বেন টা কখন?
বাজারে প্রচলিত এবং বিখ্যাত যেকোন একটি বই কিনে পড়া শুরু করবেন। বেশিরভাগ বইয়েই একই তথ্য দেয়া। ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ভিন্নতা আছে। ভিন্নতা থাকবেই।
আরও পড়ুনঃ বিসিএস বাংলা লিখিত প্রস্তুতি ও বুকলিস্ট
এবার আসি বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা প্রস্তুতি নিতে কি কি করা লাগবে।
১। প্রথমেই প্রিলিমিনারি সিলেবাস টা ভাল করে দেখে ফেলা। বিসিএস সিলেবাস দেখে কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা আছে আর কোনগুলোতে দক্ষতা নেই, সেগুলো মার্ক করে ফেলা। ধরেন আপনি, বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র। সাধারণ বিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে আপনার দক্ষতা থাকার কথা। তাহলে এগুলো আপনার প্লাস পয়েন্ট। এগুলোতে একটু কম জোর দিয়ে অন্যগুলোতে একটু বেশি সময় দিবেন।
২। প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৪-৫ টি পেপারের বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, মতামত, সম্পাদকীয় পড়ে ফেলা জরুরী। এগুলো প্রিলির পাশাপাশি লিখিতের জন্য ও কাজে দিবে। একসাথে ২ পরীক্ষার প্রিপারেশন হয়ে গেল।
বাংলা পত্রিকার পাশাপাশি ইংরেজী পেপার ও পড়ে ফেলা দরকার। লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করে লিখতে হবে ইংরেজী বিষয়ে। পত্রিকায় লিখার ধরণ খুব ভালো থাকে। তাই পত্রিকা পড়লে লিখার স্টাইল, শব্দের অর্থ জানা হয়ে যাবে।
৪৭ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে আমাদের এই প্রোগ্রামে এখনই এনরোল করুন।
৩। বিসিএস প্রশ্ন এনালাইসিস করে দেখা। বিসিএস এর প্রশ্ন কোথা থেকে আসে?
মেইন বই থেকে?
গাইড বই থেকে?
লেকচার শীট থেকে?
মনে রাখবেন, প্রশ্নকর্তারা কোন সময়ই গাইড বই থেকে প্রশ্ন করেন না। আর লেকচার শীট তো বিলাসিতা। তারা মৌলিক বই থেকে প্রশ্ন করেন।
একটা উদাহরণ দেইঃ
৩৫তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন ছিল এরকম: Women are too often ___ by family commitments. (ক) Confused (খ) controlled (গ) contaminated (ঘ) constrained
এই প্রশ্নের উত্তর যদি গাইড বইয়ে খুজতে থাকেন তাহলে খুজতেই থাকবেন।
যদি বলি এই প্রশ্নটি হুবহু এক জায়গা থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। বিশ্বাস হবে? বিশ্বাস না হলে Longman Dictionary of Contemporary English বইয়ের Constrain শব্দে গেলেই এই বাক্যটি হুবহু পাওয়া যাবে।
বিসিএস এ যত প্রশ্ন আসে তার শতকরা ৮০ ভাগই বিভিন্ন মৌলিক বই থেকে তুলে দেয়া প্রশ্ন। তাই শুধুমাত্র গাইড বই না পড়ে, পড়ার টেবিলে longman, Oxford এই বইগুলো রাখুন। যেকোন প্রশ্নের উত্তরের জন্য এগুলোর ভেতরে খুজুন।
১০০ এর মধ্যে ৯০ টি হুবহু পেয়ে যাবেন!
৪। যে বিষয়ে ইন্টারনেট দরকার সেই বিষয়ে ইন্টারনেট ঘাটা।
ভুগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রতিটি টপিক ইন্টারনেটে আছে। সময় বের করে উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া এগুলো ঘাটাঘাটি করে লিখে ফেলা। এখন যদি গণিত এর জন্য ইন্টারনেট ঘাটেন তাহলে সেই সময়টুকু বিফলে যাবে।
৫। কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলো ভুল হবেই।
ইংলিশে আপনার মাস্টার্স করা থাকলেও দেখবেন ইংরেজি সাহিত্যের কয়েকটা প্রশ্ন আপনি পারবেন না। তাই এইরকম সাহিত্য থেকে সবগুলো পারতেই হবে এমন কথা নেই। এগুলো কেউই পারে না। তাই এই বিষয়গুলোতে খুব বেশি সময় দিবেন না। যে বিষয়গুলো আপনার বারবার পড়ার পরেও ভুল হবে বা মনে থাকবে না, সেগুলো ডিরেক্ট বাদ দিয়ে দিন। আপনার ২০০ তে ২০০ পেতে হবে না। পাশ মার্ক আসলেই হল।
৬। কোন বিষয়ে বোর্ড বই পড়বেন আর কোন বিষয়ে পড়বেন না?
মেসের বন্ধু, পাড়ার বড় ভাই বোর্ড বইয়ের ব্যাপারে কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন। গণিতের জন্য ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব বোর্ড বই পড়ে ফেলতেই হবে! আমি জানিনা কোন বিসিএসে ৬ষ্ঠ শ্রেণির বই থেকে ম্যাথ এসেছে। এই বোর্ড বই পড়ে শেষ করতে গেলে অদরকারি অনেক অংক করা হয়ে যায়।
মনে রাখবেন আপনি বিসিএস ক্যান্ডিডেট। আপনি পড়ছেন শুধু প্রিলি পাশ করতে। আপনি কোন পিএইচডি করছেন না যে আপনার ধরে ধরে সব করতে হবে।
গণিতের জন্য আপনি যে কোন প্রকাশনীর একটি বই কিনে নিন। কেনার পরে টপিক ধরে ধরে লিখে লিখে পড়ুন। গণিত শুধু চোখের দেখায় হয় না। যতক্ষন না পর্যন্ত আপনার ২০ দিস্তা খাতা গণিতে ভরে যাবে ততক্ষন পর্যন্ত আপনার গণিত প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে না।
সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলা, কম্পিউটার, বাংলাদেশ বিষয়াবলি এই বিষয়গুলো আপনি বোর্ড বই ধরে ধরে শেষ করে ফেলবেন। এগুলোর উপরে বোর্ড বই থেকে প্রশ্ন আসে। আর এই বিষয়গুলোতে বোর্ড বইকেই প্রামাণ্য বা মৌলিক বলে ধরা হয়।
৭। নিজে নিজেই নোটস, শর্টকাট নিয়ম বানান।
গণিতে একই অংকের জন্য ১০০ টা শর্টকাট থাকতে পারে। আপনি আপনার সুবিধামত একটা বানিয়ে নিন। আরেকজনের সাথে মিলতে হবে এমন কথা নেই। অমুক স্যার এভাবে দিয়েছেন তাই আমিও এভাবে করব, এই চিন্তা বাদ দিন। আপনার নিয়মে অংক মিললেই হল।
৮। নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি অনুশীলন করা জরুরী। আজকাল অনুশীলন আপনার মোবাইলেই আছে।
প্লেস্টোর থেকে Hello BCS এপ নামান। এপে প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি টপিকে এক্সাম দিতে পারবেন। এক্সাম দিতে লাগবে না কোন টাকা। এভাবে আপনি খুব সহজেই বিসিএস প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
এই এপে ১ লাখ ২০ হাজারের ও বেশি প্রশ্ন আছে। অনুশীলনের জন্য এনাফ।
গতানুগতিক বাজারের মডেল টেস্ট বইগুলোতে ভুলের মাত্রা থাকে বেশি। তার চেয়ে অনলাইন এপে ভুল অনেক কম থাকে।
আর সবচেয়ে বড় কথা, আপনার ফেসবুকের অযথা সময়ে আপনি এপ ইউজ করে পরীক্ষা দিতে পারেন। মোবাইল চালানো ও হল, পড়াশুনা ও হল।
একের ভেতর দুই!
বিগত বছরের বিসিএস প্রশ্ন ব্যাংক ও সমাধান জানতে এখনই এনরোল করুন।
৯। সবশেষে, বিসিএস পরীক্ষা ১০০% মার্ক পাওয়ার কোন পরীক্ষা নয়।
তাই ভুলেও ২০০ তে ২০০ পেতেই হবে এই মানসিকতা রাখা যাবে না। পড়ার ক্ষেত্রেও বেছে বেছে পড়তে হবে। দরকারি তথ্য গুলো মাথায় রাখবেন। মনে রাখবেন আপনার মাথায় জায়গা অনেক কম। তাই খুব বেশি আজেবাজে তথ্য দিয়ে মাথা টা খারাপ করবেন না।
প্রস্তুতির শুরু থেকেই সিরিয়াস কিছু বন্ধুদের সাথে প্রস্তুতি, অনুশীলন শেয়ার করতে পারেন। তবে যদি মনে হয় অন্যদের থেকে আপনি পিছিয়ে আছেন, হতাশ হয়ে পড়েন তাহলে সোজা তাদের থেকে সরে আসবেন।
অনেকেই প্রশ্ন করেন বিসিএস প্রিলিতে পাস মার্ক কত?
বিসিএস প্রিলিতে পাস করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো মার্ক নেই। পরীক্ষায় টিকতে হলে মোটামোটি ১২০+ কার্ট মার্ক টার্গেট করে প্রস্তুতি হয়। পরীক্ষায় যত জন প্রার্থী পাস করানো হয় তাদের মধ্যে সর্বশেষ প্রার্থীর মার্কসকে কার্ট মার্ক বলা হয়।
আবার Hello BCS বা এই এপের মত কিছু এপ আছে, যারা শুরু থেকেই বিসিএস প্রস্তুতির জন্য প্রোগ্রাম নামায়। এই সব প্রোগ্রামের সাথে জড়িত থাকতে পারেন। এই প্রোগ্রামে আপনাকে কদিন পরে পরেই একটা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।এই পরীক্ষা গুলো আপনাকে দৌড়ের উপরে রাখবে। আপনি পড়াশুনা থেকে ছিটকে পড়বেন না।
মানুষের জীবনে এমন অনেক সময় আসে, যেসময় কোন কিছু ভাল লাগে না। পড়তে ইচ্ছা করে না। এগুলো খুবই স্বাভাবিক। আপনার ক্ষেত্রে ও আসবে। এই লিখা পড়ার সময় ও হয়ত আপনার বিসিএস নিয়ে পড়তে ইচ্ছে হবে না।
মনে রাখবেন ইচ্ছা আপনার গোলাম। আপনি ইচ্ছার গোলাম না। সৃষ্টিকর্তার উপরে ভরসা রাখবেন। ভালো না লাগলে কিছুদিন পড়া থেকে বিরতি নিবেন।
কোথাও ঘুরে আসবেন। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, Take a Chill Pill.
জীবন থেকে ১ টা বছর বিসিএস এর পেছনে দিবেন। আপনার পরিশ্রম, আপনার ভাগ্য আপনাকে বিসিএস ক্যাডার বানিয়ে দিবে। বিসিএস নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের সাথে ফেসবুক পেজ Hello BCS এ যোগাযোগ করতে পারবেন।
পিডিএফ ফরম্যাটে এই আর্টিকেল পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।