ব্রিটিশ আমল কি
ব্রিটিশ রাজের ইতিহাস বলতে ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী ব্রিটিশ শাসনের সময়কালকে বোঝায়।
বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসন
ভারতবর্ষে বাণিজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে ১৬০০ সালে ইংল্যান্ডে স্থাপিত হয় ‘দি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’। ১৬৫১ সালে হুগলিতে এবং ১৬৫৮ সালে কাশিমবাজারে তারা বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। ‘ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ ১৬৩০ সালে বাংলায় প্রবেশ করলেও ব্রিটিশদের সাথে টিকে থাকতে না পেরে কিছুকাল পরে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার দিকে চলে যায়। ‘ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করে ফরাসিরা ১৬৬৪ সালে বাংলায় প্রবেশ করে এবং চন্দননগর এবং চুঁচড়ায় শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে। তবে ইংরেজদের সাথে তিন দফা যুদ্ধে হেরে তারাও প্রায় একশ বছরের বাণিজ্য গুটিয়ে ইন্দোচীনের দিকে চলে যায়।
গভর্নরঃ
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীন শাসকদের বলা হত গভর্নর।
- প্রথম গভর্নর- লর্ড ক্লাইভ (১৭৬৫-১৭৭২)।
- সর্বশেষ গভর্নর-ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৭২-১৭৮৫)।
গভর্নর জেনারেল
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসক তবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধীন ছিলেন।
- ভারত শাসন সংক্রান্তরেগুলেটিং অ্যাক্ট ১৭৭৩ এর মাধ্যমে এর কার্যকর করা হয়।
- প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৭২-১৭৮৫) এবং সর্বশেষ গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং (১৮৫৬-১৮৫৮)।
ভাইসরয়
- রাণী ভিক্টোরিয়ার অধীন শাসনকর্তাকে ভাইসরয় বা বড় লাট বলা হয়।
- ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ফলশ্রুতিতে কোম্পানির শাসন শেষ হয় এবং ভাইসরয় পদের শুরু হয়।
- প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং (১৮৫৮-১৮৬২) এবং সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন (মার্চ ১৯৪৭-আগস্ট ১৯৪৭)
রবার্ট ক্লাইভ
উপমহাদেশের প্রথম ইংরেজ গভর্নর রবার্ট ক্লাইভ।
কোম্পানির দেওয়ানি লাভ : ১৭৬৫ সালে বক্সারের যুদ্ধের (১৭৬৪ সাল) পর ক্লাইভ দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সাথে এলাহাবাদে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ মুঘল বাদশাহ শাহ আলমের নিকট হতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা (১৭৬৫) : দিল্লির সম্রাট শাহ্ আলমের নিকট হতে দেওয়ানি লাভের পর বাংলার নবাবকে বৃত্তিভোগীতে পরিণত করে রবার্ট ক্লাইভ ‘দ্বৈত শাসন’ প্রবর্তন করেন। দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ক্লাইভ বাংলার নবাবের উপর শাসন ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন। রাজস্ব আদায় ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন কোম্পানীর উপর। এর ফলে নবাব পেলেন ‘ক্ষমতাহীন দায়িত্ব’ এবং কোম্পানি লাভ করল ‘দায়িত্বহীন ক্ষমতা’। দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার মারাত্মক পরিণতি হল ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবিগণ
লর্ড কার্টিয়ার
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন লর্ড কার্টিয়ার।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর : দ্বৈত শাসনের আওতায় রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রজাদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে তা আদায়ে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত করের চাপে যখন জনগণ ও কৃষকের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা সেসময় দেশে পরপর তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে খরায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাংলা ১১৭৬ বঙ্গাব্দ বা ইংরেজি ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে নেমে আসে দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া। দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে মারা গেলেও কোম্পানি করের বোঝা কমানোর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোকের মৃত্যু হয়েছিল। ইতিহাসে এটি ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট, ১৭৭৩
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজ কোম্পানির অত্যাচার নিপীড়নের বিভিন্ন দিক ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ইংল্যান্ডে দ্বৈত শাসনের বিরুদ্ধে তুমুল তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। এজন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সুপারিশক্রমে ভারত শাসন সংক্রান্ত রেগুলেটিং অ্যাক্ট, ১৭৭৩ কার্যকর করা হয়। এর ফলে কোম্পানির গভর্নরের পদ গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত হয়।
বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন।
বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নরের শাসন
ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৭২-১৭৮৫)
ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন— প্রথম গভর্নর জেনারেল।
→ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন।
→ আইন-ই-আকবরী গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
→ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে প্রথম সূচনা করেন তিনি। এন্ডমন্ড বার্ক ওয়ারেন হেস্টিংসকে মানবজাতির শত্রু বলে উল্লেখ করেন।
→ তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে রাজকোষ ও রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তর করেন।
→ ১৭৭২ সালে বোর্ড অব ডিরেক্টরসের নির্দেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা রহিত করেন।
→ তিনি পাঁচশালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।
লর্ড কর্নওয়ালিস (১৭৮৫-১৭৯৮)
- লর্ড কর্নওয়ালিস সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে বিধি বিধান চালু করেন পরবর্তীকালে তা ‘ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস’ নামে প্রচলিত হয়।
- তিনি ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দশ শালা বন্দোবস্ত চালু করেন।
- ১৭৯৩ সালে তিনি দশ শালা বন্দোবস্তকে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ বলে ঘোষণা দেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমির মালিক হয় জমিদারগণ।
- সূর্যাস্ত আইনের কারণে নির্দিষ্ট দিনে রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় বহু জমিদার তাদের জমিদারি হারায়।
লর্ড ওয়েলেসলি (১৭৯৮-১৮০৫)
→মহীশূরের শাসনকর্তা টিপু সুলতান দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি ব্রেইথওয়েটকে পরাজিত করেন।
→ সাম্রাজ্য বিস্তারে লর্ড ওয়েলেসলি কর্তৃক গৃহীত নীতির নাম অধীনতামূলক মিত্রতা।
→ লর্ড ওয়েলেসলি টিপু সুলতানকে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। টিপু সুলতান এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলে ওয়েলেসলি ১৭৯৯ সালে টিপুর বিরুদ্ধে ‘চতুর্থ মহীশূর যুদ্ধ’ ঘোষণা করেন। টিপু বীরের ন্যায় যুদ্ধ করে শহীদ হন।
→ তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা (১৮০০ খ্রিস্টাব্দে)।
→ ভারতে ওয়েলেসলির শাসনামলে সম-সাময়িক ইউরোপের শাসক ছিল নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
ডেভিড হেস্টিংস (১৮১৩-১৮২৩)
→ ১৮১৭ সালে কলকাতা হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (১৮২৩-১৮৩৫ খ্রি.)
সতীদাহ প্রথা : ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক আইন করে সতীদাহ প্রথা রহিত করেন। এই সংস্কার কাজে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক রাজা রামমোহন রায়ের সহযোগিতা লাভ করেন। সতীদাহ হলো স্বামীর চিতায় জীবন্ত স্ত্রীকেও দাহ। তৎকালীন হিন্দু সমাজে মৃত স্বামীর সাথে জীবিত স্ত্রীকেও পোড়ানো হতো। ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে সর্বপ্রথম আইন প্রণয়ন করেন।
লর্ড ডালহৌসি (১৮৪৮-১৮৫৬ খ্রি.)
→ উপমহাদেশে ইংরেজ শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাম্রাজ্যবাদী লর্ড ডালহৌসি ‘স্বত্ব বিলোপ নীতি’ প্রয়োগ করে সাঁতারা, ঝাঁসি, নাগপুর, সম্বলপুর প্রভৃতি রাজ্যগুলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
→ ১৮৫০ সালে তিনি সর্বপ্রথম কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন করেন।
→ ১৮৫৩ সালে তিনি উপমহাদেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেন।
→ ১৮৫৬ সালে তিনি হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন ( The Hindu Widows Re-marriage Act , ১৮৫৬) পাস করে হিন্দু বিধবাদের পুনঃবিবাহ চালু করেন। এই আইন প্রচলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
লর্ড ক্যানিং (১৮৫৮-১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ)
- লর্ড ক্যানিং ছিলেন উপমহাদেশের সর্বশেষ— গভর্নর জেনারেল।
- তিনি সর্বশেষ গভর্নর জেনারেল হিসেবে ১৮৫৬ ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ১৮৫৮ ১৮৬২ সাল পর্যন্ত ভাইসরয় বা বড়লাট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাই তিনি উপমহাদেশের— প্রথম ভাইসরয়।
- ক্যানিং-এর আমলে ১৮৫৭ সালে উপমহাদেশে সিপাহি বিদ্রোহ হয়।
- ১৮৬১ সালে লর্ড ক্যানিং উপমহাদেশে পুলিশ সার্ভিস ও ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস চালু করেন।
- তিনি উপমহাদেশে কাগজের মুদ্রা চালু করেন।
- জমিদারদের হাত থেকে রায়তদের রক্ষার্থে ক্যানিং টিন্যান্সি অ্যাক্ট চালু করেন।
লর্ড মেয়ো (১৮৬৯-১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ)
১৮৭২ সালে লর্ড মেয়োর শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আদমশুমারি পরিচালিত হয়।
লর্ড লিটন (১৮৭৬-৮০ খ্রিস্টাব্দ)
১৮৭৮ সালে অস্ত্র আইন (The Arms Act) পাস করে বিনা লাইসেন্সে অস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ করেন।
সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act) পাস করে দেশীয় ভাষায় প্রচারিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেন।
লর্ড রিপন (১৮৮০-৮৪ খ্রি.)
→ ১৮৮১ সালে শ্রমিক কল্যাণের জন্য ‘ফ্যাক্টরি আইন’ চালু করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এ আইনের দ্বারা শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজের বিধান চালু করা হয়।
→ ১৮৮২ সালে তিনি উইলিয়াম হান্টারকে চেয়ারম্যান করে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন।
→ কারখানাতে শিশু শ্রমিক নিয়োগ নিষিদ্ধ করেন।
→ সংবাদপত্র আইন রহিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান করেন।
→ ভারতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তক। ইলবার্ট বিল পাস করেন।
→ লর্ড রিপন কলকাতার প্রথম জনসভায় বলেন- Judge me by my acts and not by my words.
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্য কবি জসীম উদ্দিন এর অবদান
লর্ড কার্জন (১৮৯৯-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ)
বঙ্গভঙ্গের সময় ভাইসরয়ের ছিলেন।
ভারতের বৃহত্তম লাইব্রেরি ‘ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা করেন।
বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) ও ব্যামফিল্ড ফুলার
১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর কার্যকর হয়।
বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে বাংলা ২টি ভাগে বিভক্ত হয়। প্রদেশ দুইটি গড়ে ওঠে—
- পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ
বাংলাদেশ ও আসামকে নিয়ে গড়ে ওঠে।
এ প্রদেশের রাজধানী ছিল ঢাকা।
এ প্রদেশের ১ম লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন ব্যামফিল্ড ফুলার।
- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশ
পশ্চিম বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যা নিয়ে।
এ প্রদেশের রাজধানী ছিল কলকাতা।
লর্ড হার্ডিঞ্জ (১৯১০-১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ), স্বদেশী আন্দোলন ও বঙ্গভঙ্গ রদঃ
লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা দেন। প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের শুরু হয়। আন্দোলনের রণকৌশলের অন্তর্গত ছিল ব্রিটিশ পণ্য বয়কট এবং দেশীয় শিল্প ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন। এটি ১৯১১ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এই আন্দোলন ছিল প্রাক-গান্ধী যুগের সফলতম আন্দোলনগুলির অন্যতম। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। বঙ্গভঙ্গ রদের সময় ব্রিটেনের রাজা ছিলেন ৫ম জর্জ এবং ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। ১৯১২ সালে রাজধানী কলকাতা করা হলেও ১৯১২ সালে দিল্লিতে হস্তান্তর করা হয় (পূর্ব + পশ্চিম বাংলা = বেঙ্গল প্রদেশ)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ১৯১১ সালে রদ করা হলে পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের খুশি করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ঘোষিত হতেই নবাব সলিমুল্লাহ এস্টেটের জমি দেওয়ার অঙ্গীকার করেন এবং সে অনুযায়ী ৬০০ একর জমি দেওয়ার ঘোষণা করেন। বস্তুতঃ নবাবদের জমিতেই এবং সরকারি ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। তাই বলা যায়- নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
- ১৯১২ সালে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ।
- ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়।
- ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন।
- ১৯২১ সালের ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এই বিশ্ববিদ্যালযের প্রথম উপাচার্য ছিলেন স্যার পি. জে. হার্টজ এবং প্রথম ছাত্রী ছিলেন লীলা নাগ।
লর্ড চেমসফোর্ড (১৯১৬-১৯২১)
মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন (১৯১৯) প্রণীত হয় যা ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত। এই আইন মোতাবেক, কেন্দ্রে দুইকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ছিল তবে প্রকৃত ক্ষমতা ছিল ভাইসরয়ের বা বড়লাটের হাতে। প্রাদেশিক দ্বৈত শাসন নীতি কার্যকর থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ছিল গভর্নরের হাতে। এজন্য জনগণের স্বায়ত্তশাসনের দাবী পূরণ হয়নি।
লর্ড মাউন্টব্যাটেন (মার্চ-আগস্ট, ১৯৪৭ খিস্টাব্দ)
৩ জুন, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় বা বড়লাট মাউন্টব্যাটেন ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তিনি সাইরিল জন র্যাডক্লিফকে দুটি সীমানা নিযুক্তকারী কমিশনের চেয়ারম্যান করেন। ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারত স্বাধীন আইন, ১৯৪৭’ প্রণীত হয়। এ সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্লিমেন্ট এটলি।
বাংলাদেশের ইতিহাসঃ ব্রিটিশ আমলে সংঘটিত বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম
বাঙালিরা কখনই ইংরেজ শাসকদের মেনে নেয়নি। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির যুদ্ধে পরাজয় ঘটে সিরাজউদ্দৌলার। এভাবেই পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ শাসনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। আর একই সাথে বাংলায় মধ্যযুগেরও অবসান ঘটে এবং নতুন যুগের সূচনা হয়।
পলাশী যুদ্ধের পর পরই এদেশের কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। পরাধীনতার একশ বছর পর স্বাধীনতা ঘোষণা করে এদেশের সৈনিকরা ও দেশীয় রাজ – রাজারা। পরবর্তী পর্যায়ে স্বাধিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ সমাজ। বাঙালি তরুণ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দলে দলে আত্মাহুতি দিয়ে কাঁপিয়ে তোলে ইংরেজ শাসনের ভিত। উপমহাদেশের স্বাধিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে সবচেয়ে গৌরবময় ভূমিকা ছিল বাঙালিদের।
বাংলায় স্বাধিকার আন্দোলন
ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৭৯১ সালে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়’। এসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি শিক্ষিত অনুগত শ্রেণি গড়ে তোলা। তবে সকল প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও স্বাধীনতাকামী মানুষ স্বাধীকার আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে।
ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা লাভের পর প্রথম বিদ্রোহ ফকির— সন্ন্যাসী আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৭৬০-১৮০০ সাল পর্যন্ত এ বিদ্রোহ চলেছিল। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে মীর কাশিম ফকির-সন্ন্যাসীদের নিকট সাহায্য কামনা করেন। ফকির-সন্ন্যাসীগণের সহায়তার পরেও মীর কাশিম পরাজিত হলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। বাংলায় সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নায়ক-নায়িকা হিসেবে পরিচিত— ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরাণী। এই আন্দোলনের নেতা ফকির মজনু শাহের মৃত্যুর পর এই আন্দোলন যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে।
বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ)
১৭৬০ সালে ইংরেজ গভর্নর ভান্সিটার্ট মীরজাফরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মীর কাশিমকে শর্তসাপেক্ষে সিংহাসনে বসান। মীর কাশিম স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে চাওয়ায় ইংরেজদের সাথে তাঁর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। নবাব ইংরেজদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। তিনি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মুঘল সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ১৭৬৪ সালের ২২শে অক্টোবর বিহারের বক্সার নামক স্থানে ইংরেজদের সাথে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। দুর্ভাগ্যক্রমে সম্মিলিত বাহিনী মেজর মনরোর কাছে পরাজিত হয়।
৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন।
চাকমা বিদ্রোহ (১৭৭৬-১৭৮৯)
চাকমা বিদ্রোহের কারণ— চাকমা রাজা জোয়ান বকস্কে মুদ্রায় রাজস্ব দিতে বাধ্য করা হয় ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুদ্রা অর্থনীতি প্রচলনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে সেখানে অস্থিরতা দেখা যায় এবং চাকমা বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।
নেতৃত্ব দেয়— চাকমা রাজা জোয়ান বখস্ খাঁ।
তিতুমীরের আন্দোলন
তিতুমীরের প্রকৃত নাম— মীর নিসার আলী তিতুমীর।
ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্র ধরে তিতুমীর প্রথম বারাসাতে ইংরেজদের বিপক্ষে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বারাসাতের বিদ্রোহের পর ইংরেজদের সাথে যুদ্ধের আশঙ্কা করে তিনি নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশেরকেল্লা (১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ১৯ নভেম্বর) নির্মাণ করেন। তিতুমীরের তৈরি বাঁশের কেল্লা ইংরেজ সৈন্যরা ধ্বংস করে ১৮৩১ সালে।
ইংরেজ লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে ইংরেজ কামান ও গোলাগুলিতে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। এই যুদ্ধে প্রথম বাঙ্গালি হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে শহীদ হন। এই যুদ্ধে তাঁর আরও চল্লিশ সহচর শহীদ হন।
সিপাহি বিদ্রোহ
→ ১৮৫৬ সালে এনফিল্ড নামক এক প্রকার রাইফেল ব্যবহার শুরু হয়। এই বন্দুকের কার্তুজ দাঁত দিয়ে কেটে ব্যবহার করতে হয়।
গুজব রটে যে, এই বন্দুকের কার্তুজ গরু ও শুয়োরের চর্বি দিয়ে তৈরি । হিন্দু-মুসলমান সৈনিকদের মনে ধারণা জন্মে যে, তাদের ধর্ম বিনষ্ট করার জন্য এই ব্যবস্থা করেছে।
→ ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরে সিপাহি মঙ্গলপান্ডে কার্তুজ ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানান এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আক্রমণ করেন।
→ ১৮৫৭ সালের ১মে মিরাট শহরে শুরু হওয়া ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সিপাহিদের এটি বিদ্রোহ। সিপাহ বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, মহাবিদ্রোহ, ভারতীয় বিদ্রোহ, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ও ১৮৫৮ সালের গণঅভ্যুত্থান নামেও অভিহিত করা হয়।
ফরায়েজি আন্দোলন
ঊনিশ শতকে বাংলায় গড়ে ওঠা একটি সংস্কার আন্দোলন। প্রাথমিক পর্যায়ে এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ধর্ম সংস্কার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই আন্দোলনে আর্থ-সামাজিক সংস্কারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ‘ফরায়েজি’ শব্দটি ‘ফরজ’ শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। এ আন্দোলনের উদ্যোক্তা/প্রবক্তা হাজী শরীয়তউল্লাহ। হাজী শরীয়তউল্লাহের মৃত্যুর পর এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তাঁর সুযোগ্য পুত্র মুহসিনউদ্দীন ওরফে দুদু মিয়া। খাজনা আদায়ের জন্য জমিদারদের অত্যাচার রোধকল্পে দুদু মিয়া আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বলেন ‘‘জমি থেকে খাজনা আদায় আল্লাহর আইনের পরিপন্থী’’। দুদু মিয়া এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেন।
নীল বিদ্রোহ
→ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে বস্ত্রশিল্পের এক অভুতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়। ফলে কাপড়ে রং করার জন্য নীলের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় নীলচাষে বাধ্য করে ইংরেজরা। কিন্তু নীলকররা নীলচাষীদের নানাভাবে ঠকাত। নীল চাষে অসম্মতি জানালে তাদের উপর নেমে আসত অবর্ণনীয় নির্যাতন।
→ নীল চাষের প্রতিরোধে আন্দোলনে প্রথম প্রবাদ পুরুষ— সর্দার বিশ্বনাথ। সে ১৮০৮ সালে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে এবংমৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়।
→ তৎকালীন নদীয়া এবং বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার চৌগাছায় প্রথম নীল বিদ্রোহ দেখা যায় বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্ভর বিশ্বাসের নেতৃত্বে। ১৮৫৯-১৮৬২ সাল পর্যন্ত আন্দোলন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
→ নীল বিদ্রোহ দমন করার জন্য ১৮৬০ সালে সরকার গঠন করে— ‘নীল কমিশন’ বা ‘ইন্ডিগো কমিশন’। নীল কমিশন নীলচাষীদের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়। এরপর সরকার একটি আইনের দ্বারা ঘোষণা করেন যে, নীলকররা নীলচাষীদের নীল চাষে বাধ্য করতে পারবে না এবং সেটা করলে আইনত দন্ডনীয় হবে। এ আইন পাসের ফলে ১৮৬২ সালে নীল বিদ্রোহের অবসান হয়।
→ নীল চাষীদের অত্যাচারের কাহিনি নিয়ে দীনবন্ধু মিত্র রচনা করেন- ‘নীল দর্পণ’।
আরো পড়ুনঃ ৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতি : ৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি গাইডলাইন (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী)
আলীগড় আন্দোলন
→ আলীগড় কলেজকে কেন্দ্র করে যে স্বতন্ত্র রাজ‣নতিক ও সাংস্কৃতিক ধারা সৃষ্টি হয়, তাকে আলীগড় আন্দোলন বলে।
→ ১৮৭৫ সালে উত্তর প্রদেশের আলীগড়ে স্যার সৈয়দ আহমদ খান ‘মোহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ’ স্থাপন করেন যা ১৯২০ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস
→ প্রতিষ্ঠাকাল- ১৮৮৫ খিস্টাব্দ। এটি ভারতের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন।
→ প্রতিষ্ঠাতা— অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজ সিভিলিয়ান অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম। দলটির প্রথম সভাপতি- উমেশ ব্যানার্জি।
নিখিল ভারত মুসলিম লীগ
→ প্রতিষ্ঠাকাল— ৩০ ডিসেম্বর, ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায়। মুসলিম লীগের প্রকৃত নাম ছিল ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’।
→ প্রতিষ্ঠাতা— নবাব সলিমুল্লাহ, আগা খান নওয়াব ভিকার-উল-মূলুক।
→ প্রথম অধিবেশন বসে— ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে আহসান মঞ্জিল, ঢাকায়।
বাংলায় সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলন
১৯০৬ সালে ব্রিটিশ সরকার বৈপ্লবিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করে।
ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের লক্ষ্য ছিল প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংস ফোর্ডকে হত্যা করা। ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী বিহারের মোজাফফরপুরে ফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করলে অন্য এক ইংরেজের স্ত্রী এবং কন্যা নিহত হয়। ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন এবং ফাঁসি হয়। প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের জন্য নেতৃত্বে ছিলেন— স্থানীয় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটের শিক্ষক মাস্টার দা সূর্যসেন। ১৯৩০ সালের ১৮ ই এপ্রিল অস্ত্রাগারটি লুণ্ঠন করা হয়।
পাহাড়তলী রেলওয়ে ক্লাব আক্রমণ
পাহাড়তলী রেলওয়ে ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব দেন— প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
বিপ্লবী সূর্যসেন তার দল ও সাধারণ মানুষের কাছে মাস্টার দা নামে পরিচিত। ১৯৩২ সালে সেপ্টেম্বরে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করলে ব্রিটিশ সরকার সূর্যসেনসহ অধিকাংশ বিপ্লবীকে ধরতে সক্ষম হয়। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি তাঁকে ফাঁসি দেয়া হয়।
ভারত ছাড় আন্দোলন
ভারতের রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হলে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে ‘ভারত ছাড়’ দাবীতে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
তেভাগা আন্দোলন
→ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন— হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও ইলা মিত্র।
→ সময়কাল— ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দ। আন্দোলন রংপুর ও দিনাজপুরে তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এই আন্দোলন ১৯টি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
→ তেভাগা আন্দোলনের দাবী ছিল উৎপন্ন ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ পাবে মালিক এবং দুই ভাগ পাবে চাষী।
স্বাধীকার আন্দোলন সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য-
সৈয়দ আমীর আলী : মুসলমানদের অধিকার আদায়ের জন্য সৈয়দ আমীর আলী প্রতিষ্ঠা করেন ‘সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন’। আমীর আলী রচিত বইয়ের নাম- ‘The Spirit of Islam’ ও ‘A Short Story of Seracens’.
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন : দানশীলতার জন্য দানবীর বা বাংলার হাতেম তাই নামে পরিচিত হাজী মুহাম্মদ মুহসীন। তিনি সমাজ সেবক হলেও সমাজ সংস্কারক নন।
নওয়াব আবদুল লতিফ: ১৮৬৩ সালে কলকাতায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ ‘মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
রাওলাট আইন : আইনটি ১৯১৮ সালে প্রবর্তিত হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা। এই আইনেরঃপ্রতিবাদে জালিয়ানওয়ালাবাগে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়। জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে সাধারণ মানুষের উপর সেনাবাহিনী গুলি চালায় এবং অনেক সাধারণ মানুষ নিহত হয়।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড : হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়- ১৩ এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রি.। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইটহুট ত্যাগ করেন।
অসহযোগ আন্দোলন : ১৯১৯ সালে রাওলাট আন্দোলন ও জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৯২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের যুগপৎভাবে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এ আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
বাংলাদেশের ইতিহাস ব্রিটিশ আমল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত নিয়ে আজকে এই পর্যন্তই। ৪৬ তম বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই এই টপিক থেকে প্রশ্ন আসে।
Hello BCS এর সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।