বাংলা ব্যাকরণে পদাশ্রিত নির্দেশকের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বাংলায় পদাশ্রিত নির্দেশক বলতে বুঝায় পদ দ্বারা আশ্রিত বা কোন পদের সাথে আশ্রয় লাভ করে কোন পদকে আরও নির্দিষ্টতা দান করে এমন শব্দ। পদাশ্রিত নির্দেশক ইংরেজি আর্টিকেল এর প্রকারভেদ মতো।
পদাশ্রিত নির্দেশক কাকে বলে?
বিশেষ্য বা বিশেষণ পদকে বিশেষভাবে নির্দেশ করার জন্য যেসব শব্দ বা শব্দাংশ অর্থাৎ অব্যয় বা প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়, তাদের পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। যেমন – টা, টি, খানা, খানি, টুকু, পাটি ইত্যাদি। বাংলায় কোন কিছু নির্দিষ্টতা বুঝাতে ইংরেজি Definite Article এর The দ্বারা গঠিত শব্দকে বুঝায়। ইংরেজিতে The Article এর ব্যবহার ভালোভাবে বুঝতে পারলে বাংলায় পদাশ্রিত নির্দেশক এর ব্যবহার সঠিকভাবে জানতে পারবে।
আরও পড়ুনঃ কারক ও বিভক্তি কি? প্রকারভেদ ও উদাহরণ সহ জানুন
পদাশ্রিত নির্দেশক এর প্রকারভেদ
বাংলা ভাষায় বচনভেদে পদাশ্রিত নির্দেশক বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ
১. একবচনঃ একবচন প্রকাশে টি, টা, খানা, খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ – কলমটি, বইটা বৈঠকখানা ইত্যাদি।
২. বহুবচনঃ বহুবচন প্রকাশে গুলি, গুলা গুলো ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ – আমগুলি, ফলগুলো, গরুগুলো কুকুরগুলো বিড়ালগুলা প্রভৃতি।
৩. কোনো সংখ্যা বা পরিমাপের স্বল্পতা প্রকাশে টে, টুকু, টুকুন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ – তিনটে চাল, ভাতটুকু, পায়েস টুকুন, এতটুকুন মেয়ে প্রভৃতি।
৪. অনির্দেশক প্রত্যয়ঃ টি, টা, এক, জন, খান ইত্যাদি দ্বারা কাউকে বোঝায় না। অর্থাৎ নির্দিষ্টতা প্রকাশ করে না। তাই এসব প্রত্যয় অনির্দেশক প্রত্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উদাহরণ – একটা গল্প বলি, জন চারেক লোক হলেই চলবে, এক যে ছিল রাণী, গোটা কয়েক সমস্যা ইত্যাদি। এগুলো কিন্তু কোন নির্দিষ্ট জিনিসকে প্রকাশ করে না।
আরও পড়ুনঃ উপসর্গ কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি?
পদাশ্রিত নির্দেশক এর ব্যবহারঃ
১. ‘এক’ শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন – একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমি গর্বিত।
২. অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে নির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন- পাঁচটি টাকা। দশটি বছর।
৩. নিরর্থকভাবেও নির্দেশক টা, টি – র ব্যবহার লক্ষণীয় । যেমন – ন্যাকামিটা রাখ। সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি।
৪. নির্দেশক সর্বনামের পরে টা, টি যুক্ত হলে তা সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়। যেমন – ওটি যেন কার তৈরি? এটা নয় ওটা আন।
৫. বচনবাচক বা সংখ্যাবাচক শব্দের আগে ‘গোটা’ বসে নির্দিষ্টতা ও অনির্দিষ্টতা দুটোয় বুঝাতে পারে।
যেমন – গোটা দেশই ছারখার হয়ে গেছে। (অনির্দিষ্ট) গোটা তিনেক আম দাও। (নির্দিষ্ট)
৬. খানা, খানি বচনবাচক বা সংখ্যাবাচক শব্দের পরে বসে নির্দিষ্টতা ও অনির্দিষ্টতা দুটোয় বুঝাতে পারে।
যেমন – দুখানা কম্বল চেয়েছিলাম। (নির্দিষ্ট) একখানা বই কিনে নিও। (অনির্দিষ্ট)
৭. বিশেষ্য ও বিশেষণ শব্দের সাথে খানা, খানি নির্দেশক বসে। যেমন – ব্যাপারখানা, ভাবখানা, মুখখানি, আধখানা, একখানা, অনেকখানি ইত্যাদি।
৯ম-১৩তম জব চাকরির প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন কোর্সটি।
৮. যেসব ক্ষেত্রে টা বা টি বসে সেসব ক্ষেত্রে খানা বা খানি বসতে পারে।
যেমন – বাড়িটা বা বাড়িটি না বলে বাড়িখানা বা বাড়িখানিও বলা যায়।
৯. তবে কবিতায় বিশেষ অর্থে খানি নির্দিষ্টার্থে ব্যবহৃত হয় । যেমন – আমি অভাগা এনেছি বহিয়া নয়ন জলে ব্যর্থ সাধনখানি।
১০. টাক, টুক,টুকু, টো ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক নির্দিষ্টতা ও অনির্দিষ্টতা উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়।
যেমন – পোয়াটাক দুধ দাও (অনির্দিষ্টতা)। সবটুকু ঔষধ খেয়ে ফেলো (নির্দিষ্টতা)
১১. বিশেষ অর্থে, নির্দিষ্টতা জ্ঞাপনে কয়েকটি শব্দ – তা, পাটি, কেতা ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
যেমন – কেতাঃ এ তিন কেতা জমির দাম দশ হাজার টাকা মাত্র।
তাঃ দশটা তা কাগজ দাও।
পাটিঃ আমার একপাটি জুতো ছিঁড়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ অনুসর্গ কাকে বলে? অনুসর্গ কত প্রকার ও কি কি?
১২. অধিক সংখ্যার ক্ষেত্রে জন নির্দেশকটি সংখ্যা পরে আলাদা শব্দের মতো বসে। যেমন – ছয় জন, ৪০ জন ইত্যাদি।
১৩. মানুষের ক্ষেত্রে সংখ্যার সাথে জন নির্দেশক বসে। যেমন – কয়জন, একজন রাজা, লোকজন, অনেকজন, দুজন ডাক্তার ইত্যাদি।
১৪. টুকু নির্দেশক দিয়ে কোন কিছুর সামান্য অংশ বা অল্প পরিমাণ বুঝায়। এ নির্দেশকটি বিশেষ্য ও বিশেষণ শব্দের সাথে ব্যবহৃত হয়।
যেমন – ততটুকু, হাসিটুকু, শরবতটুকু, সময়টুকু ইত্যাদি
১৫. বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনামের সাথে টা, টি নির্দেশক বসে। যেমন – এটা, ওটা, বাড়িটা, কয়েকটি, দুটো, একটি, মেয়েটি ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ বাক্য কাকে বলে? গঠন ও অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ
পদাশ্রিত নির্দেশক নিয়ে আজকে এই পর্যন্তই। হেলো বিসিএস এর সাথে থাকুন। ব্যাকরণের যেকোনো বিষয়ে আপনার প্রস্তুতিকে একধাপ এগিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।