বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে, যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। এগুলো অন্য শব্দের আগে বসে। এর প্রভাবে শব্দটির কয়েক ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। তাদেরকে উপসর্গ বলে। আজকের আর্টিকেলে আমরা উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
উপসর্গের বৈশিষ্ট্যঃ
- নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরী হয়।
- শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয়।
- শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে।
- শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটে।
- শব্দের অর্থের পরিবতর্ন ঘটে।
- উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে। অর্থাৎ নিজের অর্থ না থাকলেও অর্থ সৃজনের ক্ষমতা আছে।
- উপসর্গ কথাটির অর্থ উপসৃষ্টি।
আরও পড়ুনঃ বাক্য কাকে বলে? গঠন ও অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ
উপসর্গের প্রকারভেদঃ
বাংলা ভাষায় অর্ধ শতাধিক উপসর্গ পাওয়া যায়। সাধারণত উপসর্গকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১.বাংলা উপসর্গ
২.তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ
৩.বিদেশি উপসর্গ
বাংলা উপসর্গ
বাংলা উপসর্গ (২১টি)। যথাঃ
অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন (ঊনা), কদ, কু, নি, পাতি, বি, রাম, স, সা, সু, হা, ভর।
বাংলা উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন। যেমনঃ-
- অ
নিন্দিত অর্থে-> অকেজো, অচেনা, অপয়া
অভাব অর্থে-> অচিন, অজানা,
ক্রমাগত অর্থে-> অঝোর, অঝোরে
- অঘা
বোকা অর্থে-> অঘারাম, অঘাচণ্ডী
- অজ
নিতান্ত (মন্দ) অর্থে-> অজপাড়াগাঁ, অজমূর্খ, অজপুকুর
- অনা
অভাব অর্থে-> অনাবৃষ্টি, অনাদর
ছাড়া অর্থে-> অনাছিষ্টি, অনাচার
অশুভ অর্থে-> অনামুখো
- আ
অভাব অর্থে-> আকাঁড়া, আধোয়া, আলুনি
বাজে/নিকৃষ্ট অর্থে-> আকাঠা, আগাছা
- আড়
বক্র অর্থে-> আড়চোখে, আড়নয়
আধা/প্রায় অর্থে-> আড়ক্ষ্যাপা, আড়পাগলা, আড়মোড়া
বিশিষ্ট অর্থে-> আড়কোলা (পাথালিকোলা), আড়গড়া (আস্তবল), আড়কাঠি
- আন
না অর্থে-> আনকোরা
বিক্ষিপ্ত অর্থে-> আনচান, আনমোনা
- আব
অস্পষ্টতা অর্থে-> আবছায়া, আবডাল
- ইতি
এ/এর অর্থে-> ইতিকর্তব্য, ইতিপূর্বে
পুরনো অর্থে-> ইতিকথা, ইতিহাস
- ঊনা
কম অর্থে-> ঊনপাঁজুড়ে, ঊনিশ
- কদ
নিন্দিত অর্থে-> কদবেল, কদর্য, কদাকার
- কু
কুৎসিত অর্থে-> অপকর্ষ
কুঅভ্যাস অর্থে-> কুকথা, কুনজর, কুসঙ্গ
- নি
নাই/নেতি অর্থে-> নিখুঁত, নিলাজ, নিভাঁজ, নিরেট
- পাতি
ক্ষুদ্র অর্থে-> পাতিহাঁস, পাতিশিয়াল, পাতিলেবু, পাদকুয়ো
- বি
ভিন্নতা, নাই, নিন্দনীয় অর্থে-> বিভূঁই, বিফল, বিপদ
- ভর
পূর্ণতা অর্থে-> ভরপেট, ভরসাঁঝ, ভরপুর, ভরদুপুর, ভরসন্ধ্যে
- রাম
বড়, উৎকৃষ্ট অর্থে-> রামছাগল, রামদা, রামশিঙ্গা, রামবোকা
- স
সাথে/সঙ্গে অর্থে-> সলাজ, সরব, সঠিক, সজোর, সপাট
- সা
উৎকৃষ্ট অর্থে-> সাজিরা, সাজোয়ান
- সু
উত্তম অর্থে-> সুনজর, সুখবর, সুদিন, সুনাম, সুকাজ
- হা
অভাব অর্থে-> হাপিত্যেশ, হাভাতে, হাঘরে
আরও পড়ুনঃ ধ্বনি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ
তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ (২০টি)। যথাঃ
প্র, পরা, অপ, সম, নি, অনু, অব, নির, দুর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অতি, অপি, অভি, উপ, আ।
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন।
তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন। যেমনঃ
- প্র
প্রকৃষ্ট, সম্মুখ অর্থে-> প্রভাব, প্রচলন, প্রস্ফুটিত
খ্যাতি অর্থে-> প্রসিদ্ধ, প্রতাপ, প্রভাব
আধিক্য অর্থে-> প্রগাঢ়, প্রচার, প্রবল, প্রসার
গতি অর্থে-> প্রবেশ, প্রস্থান
ধারা, পরম্পরা,অনুগামিত অর্থে-> প্রশাখা, প্রশিষ্য
- পরা
আতিশয্য অর্থে-> পরাকাষ্ঠা, পরাকান্ত, পরায়ণ
বিপরীত অর্থে-> পরাজয়, পরাভব
- অপ
বিপরীত অর্থে-> অপমান, অপকার, অপচয়, অপবাদ
নিকৃষ্ট অর্থে-> অপসংস্কৃতি, অপকর্ম, অপসৃষ্টি, অপযশ
স্থানান্তর অর্থে-> অপসারণ, অপহরণ, অপনোদন
বিকৃত অর্থে-> অপমৃত্যু
- সম
সম্মুখরূপে অর্থে-> সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ, সমাদর
সম্মুখে অর্থে-> সমাগত
- নি
নিষেধ অর্থে-> নিবৃত্তি
নিশ্চয় অর্থে-> নিবারণ, নির্ণয়
আতিশয্য অর্থে-> নিদাঘ, নিদারুন
অভাব অর্থে-> নিষ্কাম
- অব
হীনতা অর্থে-> অবজ্ঞা, অবমাননা
সম্যকভাবে অর্থে-> অবরোধ, অবগাহন, অবগত
অধোমুখিতা অর্থে-> অবতরণ, অবরোহণ
অল্পতা অর্থে-> অবশেষ, অবসান, অবেলা
- অনু
পশ্চাৎ অর্থে-> অনুশোচনা, অনুগামী, অনুজ, অনুচর, অনুতাপ, অনুকরণ
সাদৃশ্য অর্থে-> অনুবাদ, অনুরূপ, অনুকার
সঙ্গে অর্থে-> অনুকূল, অনুকম্পা
- নির
অভাব অর্থে-> নিরক্ষর, নির্জীব, নিরহঙ্কার, নিরাশ্রয়, নির্ধন
নিশ্চয় অর্থে-> নির্ধারণ, নির্ণয়, নির্ভর
বাহির, বহির্মুখিতা অর্থে-> নির্গত, নিঃসরণ, নির্বাসন
- দুর
মন্দ অর্থে-> দুর্ভাগ্য, দর্দশা, দুর্নাম
কষ্টসাধ্য অর্থে-> দুর্লভ, দুর্গম, দুরতম্য
- বি
বিশেষরূপে অর্থে-> বিধৃত, বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবস্ত্র
অভাব অর্থে-> বিনিদ্র, বিবর্ণ, বিশৃঙ্খল, বিফল
গতি অর্থে-> বিচরণ, বিক্ষেপ
অপ্রকৃস্থ অর্থে-> বিকার, বিপর্যয়
- সু
উত্তর অর্থে-> সুকণ্ঠ, সুকৃতি, সুচরিত্র, সুপ্রিয়, সুনীল
সহজ অর্থে-> সুগম, সুসাধ্য, সুলভ
আতিশয্য অর্থে-> সুচতুর, সুকঠিন, সুধীর, সুনিপুণ, সুতীক্ষড়ব
- উৎ
ঊর্ধ্বমুখিতা অর্থে-> উদ্যম, উনড়বতি, উৎক্ষিপ্ত, উদগ্রীব, উত্তোন
আতিশয্য অর্থে-> উচ্ছেদ, উত্তপ্ত, উৎফুল্ল, উৎসুক, উৎপীড়ন
প্রস্তুতি অর্থে-> উৎপাদন, উচ্চারণ
অপকর্ষ অর্থে-> উৎকোচ, উচ্ছৃঙ্খল, উৎকট
- অধি
আধিপত্য অর্থে-> অধিকার, অধিবাসী, অধিপতি
উপরি অর্থে-> অধিরোহন, অধিষ্ঠান
ব্যাপ্তি অর্থে-> অধিকার, অধিবাস, অধিগত
- পরি
বিশেষরূপে অর্থে-> পরিপক্ক, পরিপূর্ণ, পরিবর্তন,
শেষ অর্থে-> পরিশেষ
সম্মুখরূপে অর্থে-> পরিশ্রান্ত, পরীক্ষা, পরিমাণ
চতুর্দিক অর্থে-> পরিক্রমণ, পরিমণ্ডল
- প্রতি
সদৃশ অর্থে-> প্রতিমূর্তি, প্রতিধ্বনি
বিরোধ অর্থে-> প্রতিবাদ,
পৌনঃ পৌনঃ অর্থে-> প্রতি দিন, প্রতি মাস
অনুরূপপকাজ অর্থে-> প্রতিঘাত, প্রতিদান, প্রত্যুপকার
- উপ
সামীপ্য অর্থে-> উপকূল, উপকণ্ঠ
সদৃশ অর্থে-> উপদ্বীপ, উপবন
ক্ষুদ্র অর্থে-> উপগ্রহ, উপসাগর, উপনেতা
বিশেষ অর্থে-> উপনয়ন (‣পতা), উপভোগ
- অভি
সম্যক অর্থে-> অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞ, অভিভূত
গমন অর্থে-> অভিযান, অভিসার
সম্মুখ, দিক অর্থে-> অভিমুখ, অভিবাদন
- অতি
আতিশয্য অর্থে-> অতিকায়, অত্যাচার, অতিশয়
অতিক্রম অর্থে-> অতিমানব, অতি প্রাকৃত
- আ
পর্যন্ত অর্থে-> আকণ্ঠ, আমরণ, আসমুদ্র
ঈষৎ অর্থে-> আরক্ত, আভাস
বিপরীত অর্থে-> আদান, আগমন
আরও পড়ুনঃ প্রকৃতি ও প্রত্যয় কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
বিদেশি উপসর্গ
বিদেশি উপসর্গ (১৯টি)। বিদেশি উপসর্গকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।
- ফারসি উপসর্গ (১০টি): র্কা, দর, না, নিম, ফি, বদ্, বে, র্ব, ব, কম্।
- আরবি উপসর্গ (৪টি): আম্, খাস, লা, র্গ।
- ইংরেজি উপসর্গ (৪টি): ফুল, হাফ, হেড, সাব।
- উর্দু-হিন্দি উপসর্গ (০১টি): হর।
NTRCA পরীক্ষার পরিপূর্ণ নিতে এখনই এনরোল করুন।
ফারসি উপসর্গ
ফারসি উপসর্গ (১০টি)। যথাঃ
র্কা, দর, না, নিম, ফি, বদ্, বে, র্ব, ব, কম্।
ফারসি উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন। যেমনঃ
- কার
কাজ অর্থে-> কারখানা, কারসাজি, কারচুপি,কারবার, কারদানি
- দর
মধ্যস্থ, অধীন অর্থে-> দরপত্তনি, দরপাট্টা, দরদালাল
- না
না অর্থে-> নাচার, নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক
- নিম
আধা অর্থে-> নিমরাজি, নিমখুন
- ফি
প্রতি অর্থে-> ফি-রোজ, ফি-হপ্তা, ফি-বছর, ফি-সন, ফি-মাস
- বদ
মন্দ অর্থে-> বদমেজাজ, বদরাগী, বদমাশ, বদহজম, বদনাম
- বে
না বোধক অর্থে-> বেয়াদব, বেআক্কেল, বেকসুর, বেকায়দা, বেগতিক, বেতার, বেকার
- বর
বাইরে, মধ্যে অর্থে-> বরখাস্ত, বরদাস্ত, বরখেলাপ, বরবাদ
- ব
সহিত অর্থে-> বমাল, বনাম, বকলম
- কম
স্বল্প অর্থে-> কমজোর, কমবখ্ত।
আরবি উপসর্গ
আরবি উপসর্গ (৪টি)। যথাঃ
আম্, খাস, লা, গর।
আরবি উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন। যেমনঃ
- আম
সাধারণ অর্থে-> আমদরবার, আমমোক্তার
- খাস
বিশেষ অর্থে-> খাসমহল, খাসখবর, খাসকামরা, খাসদরবার
- লা
না অর্থে-> লাজওয়াব, লাখেরাজ, লাওয়ারিশ, লাপাত্তা
- গর
অভাব অর্থে-> গরমিল, গরহাজির, গররাজি
আরও পড়ুনঃ সন্ধি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?
ইংরেজি উপসর্গ
ইংরেজি উপসর্গ (৪টি)। যথাঃ
ফুল, হাফ, হেড, সাব।
ইংরেজি উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন। যেমনঃ
- ফুল
পূর্ণ অর্থে-> উুল-হাতা, ফুল-শার্ট, ফুল-বাবু, ফুল-প্যান্ট
- হাফ
আধা অর্থে-> হাফ-হাতা, হাফ-টিকেট
- হেড
প্রধান অর্থে-> হেড-মাস্টার, হেড-অফিস,
- সাব
অধীন অর্থে-> সাব-অফিস, সাব-জজ, সাব-ইন্সপেক্টর।
হিন্দী/উর্দু উপসর্গ
উর্দু-হিন্দি উপসর্গ (০১টি)। যথাঃ
হর।
উর্দু-হিন্দি উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন।
- হর
প্রত্যেক অর্থে-> হররোজ, হরমাহিনা, হরকিসিম, হরহামেশা।
আরও পড়ুনঃ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে
উপসর্গের কিছু ধ্বনি ও শব্দ রয়েছে যাদের নিজস্ব কোন অর্থ নেই। কিন্তু এই শব্দগুলো অন্য একটি শব্দের আগে বসে সেই শব্দকে একটি অর্থবোধক শব্দে পরিবর্তিত করে। যেমনঃ ‘অনা’ একটি উপসর্গ। এর নিজস্ব কোন অর্থ নেই। কিন্তু আবাদ শব্দের আগে ‘অনা’ উপসর্গটি যোগ করলে ‘অনাবাদ’ অর্থাৎ আবাদ নেই যার এই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া অনাচার, অনাসৃষ্টি এগুলো ও ভিন্ন ভিন্ন অর্থ পোষণ করে। উপসর্গের নিজের অর্থ না থাকলেও সে অন্যের অর্থের ওপর অধিপত্য বিস্তার করতে পারে। এজন্য বলা হয় উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোকতা আছে।
উপসর্গ নিয়ে আজকের আর্টিকেল এই পর্যন্তই। Hello BCS এর সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
FAQs
যেসব বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টি ধাতু এবং শব্দের আগে বসে সাধিত শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন ঘটায়, তাদের বলা হয় উপসর্গ।
উপসর্গকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১.বাংলা উপসর্গ
২.তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ
৩.বিদেশি উপসর্গ
উপসর্গের নিজের অর্থ না থাকলেও সে অন্যের অর্থের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। তাই বলা হয় উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।
বাংলা উপসর্গ (২১টি)।
তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ (২০টি)।
বিদেশি উপসর্গ (১৯টি)।