যে জনগোষ্ঠী আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না এবং পারলেও নিজস্ব সংস্কৃতি ধারণ করে বসবাস করছে তাদেরকে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বা নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি বলে। এই উপজাতি বিসিএস সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে। তাই আজকে আমরা উপজাতি সংক্রান্ত নানা জানা অজানা তথ্য জানবো।
বাংলাদেশের উপজাতি
বাংলাদেশ বিষয়াবলির একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক উপজাতি বিষয়ক। যারা ৪৬ তম বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের উপজাতি বিষয়ক টপিকের উপর ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। কেননা বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসে এই টপিক দেয়া আছে। বাংলাদেশের উপজাতি সম্পর্কিত কিছু তথ্য জেনে নিই এক নজরে।
⇒ বাংলাদেশের সংবিধানের ২৩ক নং অনুচ্ছেদে উপজাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে।
⇒ আদমশুমারি ২০১১ অনুসারে, বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার— ১.১০ শতাংশ।
⇒ ২০১০ সালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন (২০১০ এর ২৩ নং আইন) এর ধারা ১৯ এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫০টি উল্লেখ করে গেজেট প্রকাশ করে ১১শে মার্চ, ২০১৯ এ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
⇒ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সূত্র মতে, ৪৮টি।
⇒ পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট উপজাতি/জাতিসত্ত্বা বাস করে ১৩টি সম্প্রদায় (পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়)
⇒ ১১টি সম্প্রদায় (বাংলা নৃ-গোষ্ঠী পরিচিতি)
⇒ ১২টি সম্প্রদায় (সরকারি হিসাব মতে)
⇒ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উপজাতি বসবাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যা বাংলাদেশের মোট উপজাতি জনগোষ্ঠীর—৫০%। উপজাতিদের অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
⇒ পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের সার্কেল হচ্ছে— ০৩টি। যথা- চাকমা, মং ও বোমাং। রাজাকে বলা হয় সার্কেলের প্রধান। চাকমা সার্কেলের বর্তমান রাজার নাম ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তিনি চাকমা রাজবংশের ৫১তম রাজা।
⇒ খাগড়াছড়ির আদিবাসী রাজা— মং রাজা। বান্দরবান সার্কেলের চীফকে বলা হয় বোমাং।
⇒ বাংলাদেশের বৃহত্তম উপজাতি— চাকমা (প্রথম), সাঁওতাল (দ্বিতীয়)।
⇒ মাতৃতান্ত্রিক উপজাতি— গারো ও খাসিয়া (মনে রাখুন : খাগা)
⇒ মুসলমান উপজাতি— পাঙন (মৌলভীবাজার), লাউয়া।
⇒ বাংলাদেশের উপজাতি নয়— আফ্রিদি, মাওরী, জুলু, নাগা।
⇒ মগ উপজাতি পাহাড়ি এলাকায় পরিচিত— মারমা নামে।
⇒ সমতল এলাকায় পরিচিত— সাঁওতাল নামে।
⇒ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাচীন অধিবাসী— মুরং বা ম্রো
⇒ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস— ৯ আগস্ট।
⇒ বনজোগীরা বাস করে— বান্দরবানের গহীন অরণ্যে।
⇒ জুম চাষ ভারতে যে নামে পরিচিত— পোড়ু, বীরা,
⇒ পোনম প্রভৃতি নামে পরিচিত।
⇒ খিয়াংরা ঈশ্বরকে বলে— হ্নাদাগা।
⇒ প্রকৃতি পূজারি উপজাতি— মুন্ডা ও মণিপুরী।
⇒ খাসিয়া ও গারো ব্যতীত বাকী সকল উপজাতির পরিবার পিতৃতান্ত্রিক।
⇒ পুরুষের চেয়ে বেশি বয়স্ক মেয়ে বিয়ে করে— তঞ্চঙ্গা উপজাতি।
⇒ মাওরি হলো— নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী উপজাতির নাম
⇒ মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত উপজাতি— ইউ কে চিং (বীর বিক্রম)।
⇒ যে উপজাতির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ, বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহের প্রচলন রয়েছে— হাজং।
⇒ গারো সমাজে বিয়ের পর বরকে কনের বাড়িতে চলে যেতে হয়। তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নীতি মাতৃসূত্রীয়। তাই গারো মাতৃতান্ত্রিক উপজাতি।
⇒ বাংলাদেশে ৩২টি উপজাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ৪৬ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিতে কার্যকরী টিপস (46 BCS Preliminary Preparation)
অঞ্চলভিত্তিক অন্যান্য উপজাতি
উপজাতির নাম–বসবাসের স্থান
⇒ খুমী —বান্দরবানের লামা, রুমা ও থানচি থানায়
⇒ মগ— খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও পটুয়াখালী
⇒ তঞ্চঙ্গ্যা— রাঙামাটি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি
⇒ বাওয়ালী–মৌয়ালী সুন্দরবন
⇒ রাজবংশী– রংপুর
⇒ পাঙন— মৌলভীবাজার।
⇒ খিয়াং– রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান
⇒ মুন্ডা– খুলনা, যশোর, সিলেটের চা বাগান
⇒ পাংখোয়া– বান্দরবান ও রাঙামাাটি
⇒ বনজোগী (বম)— রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান
⇒ চাক— বান্দরবান
⇒ ওঁরাও– রংপুর, নওগাঁও বগুড়া, দিনাজপুর
⇒ খ্যাং— রাঙামাটির কাপ্তাই ও রাজস্থালী
⇒ লুসাই– খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য প্রস্তুতি নিতে প্রোগ্রামটিতে আজই এনরোল করুন।
উপজাতিদের উৎসব
বৈসাবি-
উপজাতিদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে ‘বৈসাবি’ বলে। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
বাংলা বছরের চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিনকে ঘিরে এ উৎসব পালিত হয়। বৈসুক, সাংগ্রাই এবং বিঝু এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ‘বৈসাবি’। বৈসুক ত্রিপুরাদের, সাংগ্রাই মারমা ও রাখাইনদের এবং বিজু চাকমাদের বর্ষবরণ উৎসব। বাংলা বছরের প্রথম দিনকে বলা হয় ফুল বিজু এবং শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্র সংক্রান্তি বা মূল বিজু।
কঠিন চীবর দান-
এটি বৌদ্ধদের একটি ধর্মীয় উৎসব। রাজবন বিহারকে কেন্দ্র করে এটি পালিত হয়। এটি মূলত চাকমাদের অনুষ্ঠান হলেও মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় পালন করে।
সান্দ্রে ও জলকেলি-
রাখাইনদের ধর্মীয় উৎসব।
ওয়ানগালা-
গারোদের ধর্মীয় উৎসব।
সাংলান-
খিয়াং সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব।
ফাগুয়া-
সাঁওতাল ও ওরাও উপজাতিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। [মনে রাখুন : ফাসাও ওরা]
উপজাতিদের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
⇒ প্রতিষ্ঠান— অবস্থান
⇒ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক একাডেমি, বিরিশিরি,নেত্রকোনা (১৯৭৭)—-নেত্রকোণা
⇒ মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি— মৌলভীবাজার
⇒ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট— রাঙামাটি
⇒ রাখাইন সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট— কক্সবাজার
⇒ উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট— বান্দরবান
⇒ কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র— কক্সবাজার
⇒ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট— খাগড়াছড়ি
⇒ রাজশাহী বিভাগীয় নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি— রাজশাহী
বাংলাদেশের উপজাতি নিয়ে আজ এই পর্যন্তই। বিসিএস সহ সকল সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিতে বাংলাদেশ বিষয়াবলি সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতে হয় এবং বেশি বেশি এমসিকিউ পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন। ধন্যবাদ।