কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের একজন বিদ্রোহী কবি। এই কবির জীবনী, কবির বাল্যকাল কৈশোর কাল কবির সাহিত্যকর্ম এই সবকিছু থেকে বিসিএস প্রাইমারি, ব্যাংক জব সহ সব ধরনের চাকরি পরীক্ষায় প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই যারা বিসিএস সহ বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের প্রয়োজন কবি কাজী নজরুল সম্পর্কে যাবতীয় যত ধরণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে এই সবগুলো মুখস্থ করা । আজকের আর্টিকেলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করবো।
কাজী নজরুল ইসলাম
- জন্ম: ২৫ মে, ১৮৯৯ (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ)
- মৃত্যু: ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ)
- বংশ: কাজী
- পিতা: ফকির আহমদ
- মাতা: জাহেদা খাতুন
- ডাকনাম: দুখু মিয়া
- উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ চল্ চল্ চল্, ধুমকেতু, বিষের বাঁশি, অগ্নিবীণা, বিদ্রোহী।
⇒ মাত্র ১২ বছর বয়সে যোগ দেন গ্রামের লেটোর গানের দলে।
⇒ তার সাহিত্য জীবনের সূচনা হয় লেটোর গানের দলের সাথেই।
⇒ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি একজন বিদ্রোহী কবি এবং আধুনিক বাংলা জগতে বুলবুল নামে খ্যাত।
⇒ ১৯১০ সালে নজরুল ছাত্রজীবনে ফিরে যান।
⇒ ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এক বছর পর তিনি পুনরায় নিজের গ্রামে ফিরে যান এবং ১৯১৫ সালে আবার রানীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ স্কুলে নজরুল ১৯১৫-১৭ সালে একটানা অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।
⇒ ১৯১৯ সালে বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নবম শ্রেণীতে ছিলেন। যুদ্ধের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারেনি। পরবর্তীতে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
⇒ ১৯১৭-২০ সাল নজরুলের সামরিক জীবনের পরিধি ছিল।
আরও পড়ুনঃ বিসিএস প্রস্তুতি:বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নজরুলের স্মৃতি বিজরিত স্থান
কাজীর শিমলা, ত্রিশালঃ কাজী রফিজ উল্লাহ্ দারোগা ১৯১৪ সালে আসানসোলের রুটির দোকান থেকে কিশোর কবি নজরুলকে ত্রিশালে কাজীর শিমলায় নিজ গ্রামে নিয়ে আসেন। কবি নজরুলকে ভর্তি করে দেন ত্রিশাল উপজেলা সদরের দরিরামপুর স্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমী) সপ্তম শ্রেণীতে। কবি নজরুলের সেই বাল্য স্মৃতিকে ধরে রাখতে এই গ্রামেরই বটতলা নামক স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
দৌলতপুরঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ও তার স্ত্রী নার্গিস এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান দৌলতপুর। ১৯২১ সালে (বাংলা ২৩ চৈত্র ১৩২৭) নজরুল ইসলাম বন্ধু আলী আকবর খানের বাড়ি কুমিল্লা মুরাদনগরের দৌলতপুরে আসেন এবং ৭১ দিন অবস্থান করেন । আলী আকবর খানের বোনের মেয়ে সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিস এই বাড়িতে থাকতেন। সেই সুবাদে কবির সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে।
কার্পাসডাঙ্গাঃ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরের ভৈরব নদীর তীরে কবির স্মৃতিঘেরা কার্পাসডাঙ্গা। ১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার আমহার্ষ্ট স্ট্রীট থেকে স্বপরিবারে এই কার্পাসডাঙ্গায় আসেন এবং টানা দুই মাস অবস্থান করেন।
কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম
১৯২০ সালের পর থেকে শুরু হয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একনিষ্ঠ কাব্য চর্চা। তার লেখা বসুমতি,মুসলিম ভারত, মাসিক প্রবাসী, বিজলী, ধুমকেতু প্রভৃতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে থাকে।
মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯২১ সালে তিনি বিদ্রোহী নামে একটি কবিতা লেখেন যার কারণে আজও থাকে বিদ্রোহী কবি বলে অমর করে রেখেছে।
নজরুলের প্রেম ও প্রকৃতির কবিতার প্রথম সংকলন দোলন-চাঁপা প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালের অক্টোবরে।
নজরুলের গান ও কবিতা সংকলন বিষের বাঁশী এবং একই মাসে ভাঙ্গার গান প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট।
কবিতাঃ
- প্রলয়োল্লাস,
- বিদ্রোহী,
- রক্তাম্বরধারিণী মা।
- অন্যান্য কবিতা হলো- ধূমকেতু, কোরবানী, মোহররম, রণভেরী, খেয়াপারের
- তরুণী, কামাল পাশা, আনোয়ার, শাত ইল আরব।
কাব্যগ্রন্থঃ
কাব্যগ্রন্থ মোট ২২ টি।
বিদ্রোহী প্রধান কাব্যঃ
অগ্নিবীণা(১৯২২)
বিষের বাঁশি(১৯২৪)
ভাঙ্গার গান(১৯২৪)
সাম্যবাদী(১৯২৫)
সর্বহারা(১৯২৬)
ফণিমণসা (১৯২৭)
জিঞ্জির(১৯২৮)
সন্ধ্যা (১৯২৯)
প্রলয়শিখা(১৯৩০)
প্রেম প্রধান কাব্যঃ
দোলনচাঁপা(১৯২৩)
ছায়ানট(১৯২৪)
পূর্বের হাওয়া (১৯২৫)
সিন্ধু-হিন্দোল(১৯২৭)
চক্রবাক (১৯২৯)
শেষ সওগাত(১৯৫৮)
শিশুতোষ কাব্যঃ
ঝিঙেফুল(১৯২৬)
সাত ভাই চম্পা
নতুন চাঁদ (১৯৪৫)
নির্ঝর (১৯৩৮)
সঞ্চিতা(১৯২৮)
জিঞ্জির(১৯২৮)
ঝড় (১৯৬০)
⇒ নজরুলের জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত ‘ নির্ঝর’ কাব্য সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, এতে ২৬ টি কবিতা আছে।
⇒ নজরুল ‘ আনন্দময়ীর আগমনে ‘ ও’ বিদ্রোহীর কৈফিয়ৎ ‘ কবিতার জন্য ১৯২৩ সালের ১৬
⇒ জানুয়ারি ১ বছর এবং ‘ প্রলয় শিখা ’ রচনার জন্য ৬ মাস কারাবরণ করেন।
৪৭ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন।
প্রবন্ধগ্রন্থঃ
- যুগবাণী(১৯২২)
- রাজবন্দীর জবানবন্দী(১৯২৩)
- দুর্দিনের যাত্রী(১৯২৬)
- ধূমকেতু, রুদ্রমঙ্গল (১৯২৭)
গল্পগ্রন্থঃ
- ব্যথার দান (প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ)(১৯২২)
- রিক্তের বেদন (১৯২৫)
- শিউলিমালা(১৯৩১)
কবিতাঃ
- কবি বাণী,
- পূজারিণী (দোলন চাঁপা);
- বিজয়িণী,
- চৈতী হাওয়া
- (ছায়ানট);
- সাম্যবাদী, মানুষ,
- নারী,
- কুলি মজুর (সাম্যবাদী);
- অগ্রপথিক,
- উমর ফারুক(জিঞ্জির);
- আমার কৈফিয়ত, কাণ্ডারী হুঁশিয়ারি (সর্বহারা)।
উপন্যাসঃ
- বাধনহারা
- মৃত্যুক্ষুধা
- কুহেলিকা
পত্রিকাঃ
- লাঙল (সাপ্তাহিক),
- ধূমকেতু (অর্ধসাপ্তাহিক)
- নবযুগ (সান্ধ্য দৈনিক)।
- চল্ চল্ কবিতাটি -‘নতুনের গান’ শিরোনামে ১৯২৮ (১৩৩৫ বঙ্গাব্দ) সালে শিখা পত্রিকায়
প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনঃ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত
নিষিদ্ধ গ্রন্থঃ-
নজরুলের মোট ৬ টি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়- ‘
অগ্নিবীণা,
বিষের বাঁশি,
ভাঙ্গার গান,
প্রলয় শিখা,
চন্দ্ৰবিন্দু,
যুগবাণী ‘।
চলচ্চিত্রে কাজী নজরুল ইসলাম-
ধূপছায়া (১৯৩১)- তিনি ছিলেন বাঙ্গালির চলচ্চিত্রকার। তার পরিচালিত এই চলচ্চিত্র ১৯৩১ সালে মুক্তি পায়।
ধ্রুব (১৯৩৪) কবি নায়ক (নারায়ণ চরিত্রে)
পাতালপুরী
গৃহদাহ, গ্রহের ফের, বিদ্যাপতি
গোরা, সাপুড়ে, নন্দিনী
খুকি ও কাঠবিড়ালি কাব্য দুটি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়।
ছদ্মনাম ও উপাধি –
কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম দুখু মিয়া। তিনি ধুমকেতু ছদ্মনামে লিখতেন। তিনি বিদ্রোহ কবি বলে পরিচিত। তাকে বিদ্রোহী কবি উপাধি দিয়েছেন বরীন্দ্রকুমার ঘোষ। এতে মতবিরোধ রয়েছে।আবার কেউ কেউ বলেছেন ব্রিটিশ সরকারই কাজী নজরুলকে বিদ্রোহী উপাধি দিয়েছে।
মনে রাখুন
⇒ প্রথম প্রকাশিত রচনা- ‘ বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’ (গল্প),
⇒ প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ- ‘ ব্যথার দান ‘ (গল্পগ্রন্থ)
⇒ প্রথম প্রকাশিত কবিতা- ‘ মুক্তি ’,
⇒ প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- ‘ অগ্নিবীণা (১৯২২)
⇒ প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ-‘ তুর্কি মহিলার ঘোমটা খোলা ‘,(১৯১৯)
⇒ প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ-‘ যুগবাণী ‘(১৯২২),
⇒ প্রথম প্রকাশিত নাটক- ‘ ঝিলিমিলি ’(১৯২৭)
⇒ প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস- বাঁধন হারা (পত্রোপন্যাস, ১৯২৭)
পুরুস্কার ও সম্মাননাঃ
⇒ ১৯৪৫ সালে কবি কাজী নজরুলকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিনী পুরুস্কার পান।
⇒ ভারত সরকার কর্তৃক ১৯৬০ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হয়।
⇒ ১৯৭০ সালে বিশ্বভারতী কবিকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করেন।
⇒ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে ডিলিট উপাধি লাভ করেন।
⇒ ১৯৭৫ সালে কবিকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
⇒ ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
নজরুলের জীবনের শেষ সময়
১৯৪২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম দূরারোগে আক্রান্ত হন এবং চিরদিনের জন্য বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
১৯৭৬ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগস্ট ৭৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কবির ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিত সংলগ্ন উত্তর পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয়।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিয়ে আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।