যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজন পরিপূর্ণ প্রস্তুতি। একটি বিষয় যখন আপনি পড়ার জন্য সিলেক্ট করবেন আপনার উচিত সেই বিষয় সম্পর্কে যাবতীয় খুঁটিনাটি পড়ে ফেলা। যাতে কিছু বাকি না থাকে। এবং আপনি একশতে একশ পারসেন্ট প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।প্রাইমারি,বিসিএস, ব্যাংকসহ সব ধরনের চাকরি পরীক্ষায় বাংলার ব্যাকরণ অংশ হতে প্রশ্ন এসে থাকে। আজকের আর্টিকেলে বাংলা ব্যাকরণের কিছু অংশ আলোচনা করবো।
বিসিএস বাংলা ব্যাকরণ প্রস্তুতিঃ
ধ্বনিঃ
ভাষার শব্দ গঠিত হয় ধ্বনির সমন্বয়ে অর্থাৎ ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ধ্বনি। ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য হলো- একটি মৌখিক ও অন্যটি লৌখিক রূপ।
⇒ভাষার মূল উপাদান/ ক্ষুদধতম একক— ধ্বনি। ভাষার স্বর বলা হয়— ধ্বনিকে। ভাষার শব্দ গঠিত হয়— ধ্বনির সমন্বয়ে।
স্বরধ্বনি :
যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমূহ অন্য কোনো ধ্বনির সংমিশ্রণ বা সহায়তা ছাড়া স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয় সেগুলোকে স্বরধ্বনি বলে।
- স্বরধ্বনি— (১১টি)।
- হ্রস্ব স্বর— মোট চার (৪) টি। যথা- অ, ই, উ এবং ঋ।
- দীর্ঘ স্বর— মোট সাত (৭) টি। যথা- আ, ঈ, ঊ, এ, ঐ, ও এবং ঔ।
- মৌলিক স্বরধ্বনি— মোট সাত (৭)টি। যথা- অ, ই, উ, এ, ও, আ এবং এয়্যা।
- যৌগিক স্বরবর্ণ— মোট দুই (২) টি। যথা- ঐ এবং ঔ।
- যৌগিক স্বরধ্বনি— ২৫টি।
- ঐ, ঔ— এ দুটি দ্বিস্বর বা যুগ্ম ̄স্বরধ্বনির প্রতীক। যেমন :অ + ই = অই; অ + উ = অউ বা, ও + উ = ওউ
- মূল স্বরধ্বনি নয়— ঐ এবং ঔ।
- উচ্চারণের সময় মুখবিবর উন্মুক্ত থাকে বলে ‘আ’ কে বলা হয়- বিবৃত স্বরধ্বনি।
ব্যাঞ্জন ধ্বনি :
যে সব ধ্বনি অন্তত একটি স্বরধ্বনির সংমিশ্রণ বা সহায়তা ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না, সেগুলোই ব্যাঞ্জন ধ্বনি।
স্পর্শ ধ্বনি: কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা, দত্ত, ওষ্ঠ্য স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় । ক থেকে ম পর্যন্ত পঁচিশটি স্পর্শ ধ্বনি। উচ্চারণ অনুযায়ী স্পর্শ ধ্বনি ৫ ভাগে বিভক্ত।
- অল্পপ্রাণ ধ্বনি: কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না। যেমন: ক, গ ইত্যাদি।
- মহাপ্রাণ ধ্বনি: কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয়। যেমন: খ, ঘ ইত্যাদি I
- অঘোষ ধ্বনি: কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না। তখন ধ্বনিটির উচ্চারণ গাম্ভীর্যহীন মৃদু হয়। যেমন: ক, খ ইত্যাদি।
- ঘোষ ধ্বনি: ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়। যেমন: গ, ঘ ইত্যাদি।
- নাসিক্য ধ্বনি: উচ্চারণকালে নাক দিয়ে ফুসফুস তাড়িত বাতাস বের হয় এবং উচ্চারণের সময় নাসিকার আংশিক সাহায্য পায় । নাসিক্য ধ্বনি ৫ টি। যেমন: ঙ, ঞ, ণ, ন, ম।
অন্ত:স্থ ধ্বনি: স্পর্শ বা উষ্ম ধ্বনির অন্তরে অর্থাৎ মাঝে আছে বলে এগুলোকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয়। যেমন: য, র, ল, ব।
উষ্ম ধ্বনি: যে ব্যঞ্জনের উচ্চারণে বাতাস মুখবিহ্বরের কোথাও বাধা না পেয়ে কেবল ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং শিশ ধ্বনির সৃষ্টি করে, সেটি উষ্ম বা শিশ ধ্বনি। যেমন: শ, ষ, স, হ-এ ৪ টি উষ্মবর্ণ। শ, ষ, স- এ তিনটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অঘোষ অল্পপ্রাণ এবং ‘ হ’ ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি।
অযোগবাহ ধ্বনি:অন্য বর্ণের সঙ্গে যোগ রেখে যে ধ্বনিগুলোর প্রয়োগ হয় তাদের অযোগবাহ ধ্বনি বলে। যেমন: ং এবং ঃ। বিসর্গ (ঃ) এর উচ্চারণ হ এর মতো।
ব্যঞ্জনধ্বনির অন্যান্য শ্রেণিবিভাগ:
- র-কে কম্পনজাত ধ্বনি বলে।
- ং এবং ঃ কে পরাশ্রয়ী ধ্বনি বলে।
- ল ধ্বনি হচ্ছে পার্শ্বিক ধ্বনি।
- ড় ও ঢ় ধ্বনি হচ্ছে তাড়নজাত ধ্বনি।
- চন্দ্ৰবিন্দুকে (*) আনুনাসিক ধ্বনি বলে।
ধ্বনির পরিবর্তনঃ
বিভিন্ন কারণে মূল ধ্বনি উচ্চারণ না করে, ধ্বনি যখন বিকৃততভাবে উচ্চারণ করা হয়, তখন ধ্বনির পরিবর্তন হয়। যেমন- ফাল্গুন -> ফাগুন (একটি ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেয়েছে)।
ধ্বনি পরিবর্তন ২ প্রকার। যথাঃ স্বরধ্বনির পরিবর্তন ও ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন।
ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন
- ব্যঞ্জন শব্দটি থাকলে ব্যঞ্জন ধ্বনির পরিবর্তন। যেমন : দ্বিত্ব ব্যঞ্জন , ব্যঞ্জন বিকৃতি, ব্যঞ্জনচ্যুতি ইত্যাদি।
- শব্দের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জন বর্ণ হলে সেটি হবে ব্যঞ্জন ধ্বনি পরিবর্তন। যেমন : ধ্বনি বিপর্যয়, সমীভবন, বিষমীভবন, র-কার লোপ, হ-কার লোপ ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ শব্দ কাকে বলে? শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
বিভিন্ন ধরনের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন
- বিষমীভবন: বিষমীভবনের ক্ষেত্রে দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তন ঘটে। যেমন: লাল> নাল, শরীর> শরীল, তরোয়ার> তলোয়ার, লাঙ্গল> নাঙ্গল, জরুরি> জরুলি।
- . ধ্বনি বিপর্যয়: শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর স্থান পরিবর্তনকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমনঃ পিশাচ> পিচাশ, লাফ> ফাল, (ইংরেজি) বাক্স> (বাংলা) বাস্ক, (জাপানি) রিক্সা>(বাংলা) রিস্কা, পাগলা> পালগা, টোপলা> টোলপা ইত্যাদি।
- ব্যঞ্জন বিকৃতি: শব্দের মধ্যে কোনো কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তন হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হলে তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলা হয়। যেমন: ধাইমা> দাইমা, কবাট> কপাট, ধোবা> ধোপা।
- সমীভবনঃ সমীভবনে দুটো ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে সমতা লাভ করে। যেমন: জন্ম> জন্ম, পদ্ম> পদ্দ, তৎ + হিত> তদ্ধিত, কাঁদনা> কান্না
- প্রগত (Progressive): সমীভবন পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। যেমন- চক্র>চকক, পদ্মা> পদ্দ, লগ্ন> লগগ ইত্যাদি।
- পরাগত (Regressive): সমীভবন পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয়, একে বলে পরাগত সমীভবন। যেমন- তৎ + জন্য> তজ্জন্য, তৎ + হিত> তদ্ধিত, উৎ + মুখ> উন্মুখ ইত্যাদি।
- অন্যোন্য (Mutual) সমীভবন: যখন পরস্পরের প্রভাবে দুটো ধ্বনিই পরিবর্তিত হয় তখন তাকে বলে অন্যোন্য সমীভবন। যেমন- সংস্কৃত: সত্য> প্রাকৃত সচ্চ। সংস্কৃত: বিদ্যা> প্রাকৃত বিজ্জা ইত্যাদি।
- অন্তর্হতি: পদের মধ্যে কোন ব্যঞ্জন লোপ হলে অন্তহর্তি হয়। যেমন: ফলাহার> ফলার, ফাল্গুন> ফাগুন, আলাহিদা> আলাদা।
- হ-কার লোপ : পদের মধ্য থেকে শুধু ‘হ’-কার হারিয়ে গেলে তাকে ‘হ’-কার লোপ বলে। যেমন : ড় গাহিল ˃ গাইল (‘হ’ ব্যঞ্জনধ্বনি হারিয়ে গেল)
- ব্যঞ্জনদ্বিত্বা : শব্দকে জোর দিয়ে উচ্চারণ করার জন্য বর্ণযুক্ত বা দ্বিত্ব হলে, তাকে ব্যঞ্জনদ্বিত্বা বলে। যেমন : ড় পাকা ˃ পাক্কা (জোর দিয়ে উচ্চারণের জন্য ‘ক’ ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব হয়েছে), ড় সকাল ˃ সক্কাল জোর দিয়ে উচ্চারণের জন্য ‘ক’ ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব হয়েছে)
- ‘র’-কার লোপ : ‘র’-কার লোপ পেয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন : ড় তর্ক ˃ তক্ক , করতে ˃ কত্তে, মারল ˃ মাল্ল (‘র’-কার লোপ পেল এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলো)
আরও পড়ুনঃ বিসিএস প্রস্তুতিঃ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগ (Bangla literature bcs preparation)
স্বরধ্বনির পরিবর্তন
- স্বরশব্দটি থাকলে স্বরধ্বনি পরিবর্তন। যেমন : আদি স্বরাগম, মধ্য স্বরাগম, অন্ত স্বরাগম, স্বরলোপ ইত্যাদি।
- শব্দের প্রথম বর্ণ স্বরবর্ণ হলে স্বধ্বনির পরিবর্তন। যেমন : অপিনিহিতি, অসমীকরণ,ইত্যাদি।
বিভিন্ন ধরনের স্বরধ্বনির পরিবর্তন
- আদি স্বরাগম: উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের প্রথম সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিকে না ভেঙ্গে এর আগে কোন স্বরধ্বনির আগমন করলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন: স্কুল> ইস্কুল, স্টেশন> ইস্টিশন, স্ত্রী> ইস্ত্রী।
- মধ্য স্বরাগম: মধ্য স্বরাগমে সাধারণত সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। যেমন: শ্লোক> শোলক; স্বপ্ন> স্বপন। মধ্যস্বরাগমকে বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তিও বলা হয়।
- অন্ত্যস্বরাগম: কখনো কখনো উচ্চারণের সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে, এরূপ স্বরাগমকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন: বেঞ্চ> বেঞ্চি, দিশ> দিশা, সত্য> সত্যি।
- অপিনিহিতি: অপিনিহিতির ক্ষেত্রে পরের ই-কার বা উ-কার আগে চলে আসে। যেমন: আজি>আইজ, চারি> চাইর, সাধু> সাউধ। আবার য ফলার অন্তর্নিহিত ই ধ্বনিরও অপিনিহিতি ঘটে। যেমন: সত্য> সইত্য, কন্যা> কইন্যা।
- অসমীকরণ: একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে কোনো স্বরধ্বনি যুক্ত হলে তাকে অসমীকরণ বলে। যেমন: টপ + টপ> টপাটপ, ধপ + ধপ> ধপাধপ।
- সম্প্রকর্ষ: উচ্চারণের দ্রুততার জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে সম্প্রকর্ষ বলা হয়। যেমন: জানালা> জানলা, সুবর্ণ> স্বর্ণ, আশা> আশ। সম্প্রকর্ষকে স্বরলোপও বলা হয়।
- স্বরসঙ্গতিঃএকটি স্বরধ্বনির প্রভাবে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলা হয়। যেমন: মুলা> মুলো, বিলাতি> বিলিতি, দেশি> দিশি।
- প্রগত (Progressive): আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- মুলা> মুলো, শিকা> শিকে,, তুলা> তুলো।
- পরাগত (Regressive): অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- আখো> আখুয়া এখো, দেশি> দিশি।
- মধ্যগত (Mutual): আদ্যস্বর ও অন্ত্যস্বর কিংবা অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- বিলাতি> বিলিতি
- অন্যোন্য (Reciprocal) আদ্য ও অন্ত্য দু স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- মোজা> মুজো।
- অভিশ্রুতি: বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদানুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন: শুনিয়া> শুনে, চলিয়া> চলে, হাটুয়া> হাউটা> হেটো।
৪৬ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে আমাদের এই কোর্সে এখনই এনরোল করুন।
৪৬ তম বিসিএস বিজ্ঞপ্তি ২০২৪ সালের জানুয়রারি মাসে প্রকাশিত হতে পারে। সঠিক সময়ে বাংলা ব্যাকরণ সহ সকল বিষয়ের জন্য বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করুন।