বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করতে হলে ৩ ধাপে পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতিটি ধাপের জন্য আলাদা সিলেবাস আছে। তাই বিসিএস সিলেবাস ভালোভাবে জেনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়। বিসিএস পরীক্ষা বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ক্ষেত্রবিশেষে জটিল ও বটে। এই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে আপনাকে ৩ বার পরীক্ষা দিতে হবে। তার মানে যমের সামনে একবার নয় তিন, তিনটি বার পড়তে হবে।
বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আপনার হয়ত “পরীক্ষা” সিস্টেমকে গালি দিতে ইচ্ছা হবে। বলে রাখি “পরীক্ষা” আবিষ্কার করেছিলেন হেনরি ফিশেল নামের এক আমেরিকান ব্যবসায়ী। ভদ্রলোক গত হয়েছেন বেশ কয় বছর আগে। সুতরাং ভদ্রলোককে ভাল-মন্দ বলে কোন লাভ নেই। বরং চলুন বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতির ধরণ দেখে নেই।
অহ আচ্ছা তার আগে কিছু কথা জানা দরকার। যারা বিসিএস এ উত্তীর্ণ হোন তাদেরকে বিসিএস ক্যাডার বলা হয়। সাধারণত ২ ধরণের ক্যাডার থাকে। সাধারণ ক্যাডার এবং কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডার। পররাষ্ট্র, এডমিন, পুলিশ এগুলো হলো সাধারণ ক্যাডার। অন্যদিকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এরা হলেন কারিগরি ক্যাডার। সাধারণ ক্যাডারে যে কেউ আবেদন করতে পারবেন তবে কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারে চান্স পেতে হলে উক্ত বিষয়ে পড়াশুনা থাকতে হবে। যেমনঃ ডাক্তারি পেশায় যেতে হলে ডাক্তারি পড়াশোনা, এমবিবিএস পাশ করতে হবে। একজন ডাক্তার চাইলেই সাধারণ ক্যাডারে যেতে পারবেন। কিন্তু একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র বিসিএস পাশ করে ডাক্তার হতে পারবেন না। কারণ ডাক্তারি বিষয়ে উনার পড়াশুনা নেই।
বিসিএস পরীক্ষার ৩টি ধাপঃ
প্রথম ধাপঃ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা
প্রথম ধাপঃ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।
এই পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। মানে, প্রতিটি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য ৪টি অপশন দেয়া থাকে। আপনাকে যেকোন একটি উত্তর করতে হয়। একটি OMR শিটে প্রশ্নের সঠিক অপশনে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ০১। তবে প্রতিটি ভুল প্রশ্নের জন্য জরিমানা গুণতে হবে ০.৫০।
তাহলে, বিসিএস কি নেগেটিভ মার্কিং আছে?
– হ্যাঁ আছে।
নেগেটিভ মার্ক কত?
– ০.৫।
সোজা বাংলায় যার অর্থ, প্রতি ২টি প্রশ্ন ভুল করলে সেই ২ প্রশ্নের নম্বর তো পাবেনই না, বরং আপনার মোট নম্বর থেকে (০.৫*২) = ১ কাটা যাবে।
বিসিএস এ অনেক বেশি সংখ্যক প্রার্থী আবেদন করেন। এই সংখ্যা কমানোর জন্য প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষাই হল প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর পরের ধাপ গুলোতে যোগ হয় না। প্রিলিতে টিকলে পরের ধাপ অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ১০ টি বিষয়ে ২০০ নম্বর থাকে।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয় ও মানবন্টনঃ
বিষয়ের নাম | নম্বর |
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য | ৩৫ |
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য | ৩৫ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী | ৩০ |
আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী | ২০ |
ভূগোল,পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা | ১০ |
সাধারণ বিজ্ঞান | ১৫ |
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি | ১৫ |
গাণিতিক যুক্তি | ১৫ |
মানসিক দক্ষতা | ১৫ |
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন | ১০ |
মোট নম্বর | ২০০ |
দ্বিতীয় ধাপঃ লিখিত পরীক্ষা।
লিখিত পরীক্ষা থেকে বিসিএস এর মূলযাত্রা শুরু। মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থী চাইলে বাংলা অথবা ইংরেজি দুই ভাষায়ই উত্তর লিখতে পারবেন। ব্যাপারটা এমন না যে, আমি ইংরেজিতে লিখলে আমাকে বেশি নম্বর দেয়া হবে। লিখিত পরীক্ষার নম্বর ভাষার উপর নয় বরং লেখার মানের উপর নির্ভর করে। লিখিত পরীক্ষা সাধারণ ক্যাডার এবং কারিগরি ক্যাডারের জন্য আলাদা হয়।
সাধারণ ক্যাডারের বিষয় ভিত্তিক মানবন্টনঃ
আবশ্যিক বিষয়ের নাম | নম্বর |
বাংলা | ২০০ |
ইংরেজি | ২০০ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী | ২০০ |
আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী | ১০০ |
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা | ১০০ |
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১০০ |
মোট নম্বর | ৯০০ |
কারিগরি ক্যাডাররের বিষয় ভিত্তিক মানবন্টনঃ
আবশ্যিক বিষয়ের নাম | নম্বর |
বাংলা | ১০০ |
ইংরেজি | ২০০ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী | ২০০ |
আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী | ১০০ |
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা | ১০০ |
পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয় | ২০০ |
মোট নম্বর | ৯০০ |
সাধারণ ক্যাডারে যেখানে বাংলায় ২০০ থাকে সেখানে কারিগরি ক্যাডারে বাংলা বিষয়ে ১০০ নম্বর থাকে। আবার সাধারণ ক্যাডারে সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ১০০ নম্বর থাকলেও কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারে এই বিষয় নেই।
একজন প্রার্থী চাইলে সাধারণ এবং কারিগরি ২ ক্যাডারেই আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ ক্যাডারের ৯০০ নম্বরসহ পদ সংশ্লিষ্ট ২০০ নম্বরের বিসিএস প্রশ্ন আন্সার করতে হবে।
যেমনঃ একজন ডাক্তার যদি উভয় ক্যাডারে আবেদন করেন তাহলে উনি সাধারণ ক্যাডারের নির্ধারিত ৯০০ নম্বর এবং ২০০ নম্বরের মেডিকেল বিষয়ের উপর পরীক্ষা দিবেন। অর্থাৎ মোট ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিবেন। উভয়ক্ষেত্রে পাশ মার্ক হলো ৫০%।
৪৬ তম বিসিএস ১২০ দিনে প্রস্তুতি নিতে আমাদের এই প্রোগ্রামে এখনই এনরোল করুন।
অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, বিসিএস প্রিলির কতদিন পর রিটেন হয়?
আসলে বিসিএস লিখিত পরীক্ষা কত দিনে হয় এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। এটা আসলে বিপিএসসি এর সিদ্ধান্ত এর উপর নির্ভর করে। অনেক সময় প্রিলির ৩ মাস পড়েই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক সময় আবার ৬ মাস পড়েও হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ভালো হলে পরীক্ষার পর পরই লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা উচিৎ।
তৃতীয় ধাপঃ ভাইভা পরীক্ষা।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। মৌখিক পরীক্ষার গড়পাস নম্বর ৫০%।
আরও পড়ুনঃ ৪৬ তম বিসিএস প্রস্তুতি : ১৫টি টেকনিকে ৪৬ তম বিসিএস প্রিলি পাসের প্রস্তুতি শুরু করুন (46 BCS Preparation)
বিসিএস ভাইভা বোর্ড কিভাবে গঠন করা হয়?
প্রার্থীদের উপযুক্ততা নির্ধারণের জন্য বিসিএস পরীক্ষা বিধিমালা (২০১৪) অনুযায়ী BPSC নিম্নোক্তভাবে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড গঠন করে থাকে-
১.কমিশনের চেয়ারম্যান/সদস্য-বোর্ড চেয়ারম্যান।
২.সরকার কর্তৃক মনোনীত যুগ্মসচিব বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তা-বোর্ড সদস্য।
৩.কমিশন কর্তৃক মনোনীত বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ-বোর্ড সদস্য।
এই তিন সদস্যের এক বা একাধিক সদস্য নিয়ে ভাইভা বোর্ড গঠন করা হয়। সাধারণ ১৫টি বোর্ড গঠন করা হয়।
লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের উপর ভিত্তি করে বিপিএসসি একজন প্রার্থীকে ক্যাডারে সুপারিশ করে।
চূড়ান্ত ভাবে নিয়োগ পাওয়ার আগে প্রত্যেক ক্যাডারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং এনএসআই (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) ভেরিফিকেশন করা হয়। এই ৩ টি পরীক্ষায় উতরে গেলে ক্যাডাররা গেজেটেড ভুক্ত হন।
বিসিএসে যাঁরা ক্যাডার সার্ভিসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হোন না, তাঁদের অনেকেই নন-ক্যাডার হিসেবে চাকরির সুযোগ দেয়া হয়।বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) দুই ধরনের নিয়োগ প্রদান করে থাকে—
১. বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি (মোট ১৫০০ নম্বরের পরীক্ষা),
২. অন্যান্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নন-ক্যাডারে নিয়োগ (মোট ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা)।
বিসিএস উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত নন, এমন প্রার্থীদের নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা-২০১০ ও সংশোধিত বিধিমালা (২০১৪) অনুযায়ী নন-ক্যাডারে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সুপারিশ করা হচ্ছে। এতে বিসিএস উত্তীর্ণ মেধাবীরা ক্যাডার না পেলেও নন-ক্যাডারের চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছেন।
বিসিএস উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত নন, এমন প্রার্থীদের দুই ধরনের নন-ক্যাডারে চাকরি দেওয়া হয়।
১. জেনারেল (এই চাকরিগুলোতে সব ডিসিপ্লিনের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়)।
২. টেকনিক্যাল (চাকরির পদসংশ্লিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়)।
বিসিএস নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের সাথে ফেসবুক পেজ Hello BCS এ যোগাযোগ করতে পারবেন। তাছারা আপনি Hello BCS অ্যাপ বাবহার করে বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির সকল প্রস্তুতি নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
পিডিএফ ফরম্যাটে এই আর্টিকেল পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।