এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ ধ্বনির সমষ্টিকে শব্দ বলে। অর্থই শব্দের প্রাণ। অর্থাৎ এক বা একাধিক বর্ণ মিলে কোনো অর্থ প্রকাশ করলে তাকে শব্দ বলে।
শব্দের বৈশিষ্ট্যঃ
- শব্দের ক্ষুদ্রতম একক বর্ণ। ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ধ্বনি।
- বাক্যের মূল উপাদান / বাক্যের প্রাণ শব্দ
- বাক্যের মূল উপকরণ শব্দ
- বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক শব্দ
শব্দের প্রকারভেদঃ
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
গঠনমূলক দিক থেকে শব্দ দুই প্রকার।
- মৌলিক শব্দ
- সাধিত শব্দ
মৌলিক শব্দঃ যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাদেরকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমনঃ
তিন, লাল, গোলাপ, নাক, মা ইত্যাদি।
সাধিত শব্দঃ যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমনঃ
- চাঁদের মত মুখ (সমাসবদ্ধ হয়ে) = চাঁদমুখ
- ডুব + উরি (প্রত্যয় সাধিত হয়ে) = ডুবুরি
- প্র + শাসন (উপসর্গযোগে) = প্রশাসন
- হাত + ল = হাতল,
- চল + অন্ত = চলন্ত,
- মনু + অ/ ষ্ণ = মানব,
- ধাতু + অ/ ষ্ণ = ধাতা,
- এক + অঙ্ক = একাঙ্ক।
২.অর্থগতভাবে শব্দ তিন প্রকার।
- যৌগিক শব্দ
- রূঢ়ি শব্দ
- যোগরূঢ় শব্দ
যৌগিক শব্দঃ যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই রকম তাদের যৌগিক শব্দ বলে। যেমন :
- গায়ক= গৈ + ণক (অক) ; অর্থ = গান করে যে
- কর্তব্য = কৃ তব্য; অর্থ = যা করা উচিৎ
- বাবুয়ানা = বাবু + আনা; অর্থ = বাবুর অভাব
- মধুর = মধু + র; অর্থ = মধুর মতো মিষ্টি গুণ যুক্ত
- দৌহিত্র = দুহিতা + ষ্ণ্য; অর্থ = কন্যার পুত্র
- চিকমার = চিক + মারা; অর্থ = দেওয়ালের লিখন
রূঢ়ি শব্দঃ
যেসব শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় জাত অর্থ এবং ব্যবহারিক অর্থ পৃথক হয় বরং লোক প্রচলিত অর্থ ব্যবহারিক অর্থ হিসেবে প্রকাশ পায় তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন :
- হস্তী=হস্ত + ইন, অর্থ-হস্ত আছে যার; কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়।
- বাঁশি বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু নয়, শব্দটি সুরের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র, বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয় ।
যোগরূঢ় শব্দ
যেসব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ সম্পূর্ণ পৃথক নয় বরং ব্যুৎপত্তিগত অর্থকে অনুসরণ করে ব্যবহারিক অর্থ প্রকাশিত হয় তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে।
যেমন :
পঙ্কজ, মহাযাত্রা, রাজপুত, জলধি, সরোজ, ডাকাত ইত্যাদি যোগরূঢ় শব্দ।
আরও পড়ুনঃ Verb কাকে বলে? Verb কত প্রকার ও কি কি?
৩) উৎসগত দিক দিয়ে শব্দ ৫ প্রকার।
- তৎসম
- অর্ধ-তৎসম
- তদ্ভব
- দেশি
- বিদেশি
তৎসম শব্দঃ
যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে সোজাসুজি বাংলা ভাষায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তি রয়েছে , সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলা হয়। তৎ অর্থ সংস্কৃত, সম অর্থ সমান অর্থাৎ তৎসম অর্থ সংস্কৃতের সমান। তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ।
যেমনঃ চন্দ্ৰ, সূর্য, নক্ষত্র, পাত্র, ভবন, মনুষ্য, হস্ত, বৃক্ষ, ভ্রাতা, ভগ্নী, ধর্ম, পুষ্প, পিতা, মাতা, কর্মকার, চর্মকার, কৃষ্ণ, মস্তক, ঘৃত, রাত্রি, সন্ধ্যা, কর্ম, পর্বত, অল্প, অদ্য, কল্য, মুক্তি, পুত্র, দধি, ধূম্ৰ।
অর্ধ-তৎসম শব্দঃ
বাংলা ভাষায় কিছু সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়, এগুলোই অর্ধ-তৎসম শব্দ।
যেমনঃ
জ্যোৎস্না<জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ< ছেরাদ্দ, গৃহিণী< গিন্নী, কুৎসিত< কুচ্ছিত।
বোষ্টম, কেষ্ট, চন্দর, গতর, বিষ্টু, তেষ্টা, হথ, নেমন্তন, সুয্যি, পুরুত, পেন্নাম, মশায়, কন্ন, খিদে।
আরও পড়ুনঃ সন্ধি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?
তদ্ভব শব্দঃ
যে সব শব্দ মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায় কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তনের ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। ‘ তৎ ’ অর্থ তার এবং ‘ ভব ’ অর্থ উৎপন্ন। তদ্ভব শব্দগুলোকে খাঁটি বাংলা শব্দও বলা হয়।
যেমনঃ
- সংস্কৃত (হস্ত) – প্রাকৃত (হথ)-তদ্ভব (হাত)
- চর্মকার-চম্মআর – চামার (তদ্ভব)
- চাঁদ, কান, মাথা, সাপ, মা, পা, ঘি, কামার, দুধ, সব, পাখি ইত্যাদি।
দেশি শব্দঃ
বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত রয়েছে। এগুলোই দেশি শব্দ হিসেবে পরিচিত।
যেমনঃ
- কুড়ি – কোল ভাষা, পেট – তামিল ভাষা, চুলা-মুন্ডারী ভাষা।
- এরূপ কুলা, গঞ্জ, চোঙ্গা, টোপর, ডাব, ডাগর, ঢেঁকি, খেয়া, খোঁটা, বাদুর, চুলা, ডিঙ্গা, নারিকেল, ঝোল, খোল, ডিঙি, ঝিঙা, ডাসা, ঝাউ, ঝাঁটা, ঢিল, খাঁদা, বোঁচা, ঝিনুক, কাতলা, চিংড়ি, চাউল, কালা, বোবা, মুড়ি, কুড়ি, ঢোল, ঠোঙ্গা।
বিদেশী শব্দঃ
রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় স্থান করে নিয়েছে। এসব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ।
যেমনঃ
- আরবি শব্দ: তুফান, মহকুমা, রায়, দলিল, এজলাস, কানুন, মর্সিয়া, আল্লাহ, হারাম, হালাল, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, গোসল, ওযু, কিয়ামত, শরিফ, সিয়াম, মুনাফা, মূলতবি, বোরন, জিরকোনিয়াম, আজব, শরবত, নগদ, বাকি।
- ফারসি শব্দ: খোদা, নামায, তারিখ, বেহেশত, দোযখ, রোজা, চশমা, পেরেশান, জিন্দাবাদ, হাঙ্গামা, ফরমান, ফরিয়াদি, শিরোনাম, জায়নামাজ, সরকার, শাদি, শাবাশ, সুদ, সেতারা, বকলম।
- পর্তুগিজ শব্দঃ আনারস, আলকাতরা, পিস্তল, কেরানী, পেয়ারা, আলপিন, আলমারি, গীর্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি, জানালা, ইংরেজ, সাবান, ইস্পাত, বোতাম।
- ফরাসি শব্দ: কার্তুজ, কুপন, ডিপো, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, রেনেসাঁ, আঁতাত, বুর্জোয়া।
- ওলন্দাজ: ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন।
- গুজরাটি: খদ্দর, হরতাল, জয়ন্তি।
- পাঞ্জাবি: চাহিদা, শিখ
- ইংরেজি: পুলিশ, এজেন্ট, আফিম, কলাম, লাগেজ।
- তুর্কি: চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা, বাবুর্চি, কাঁচি, বন্দুক, বাবা, লাশ, উজবুক, খাতুন, বেগম, কুলি, সওগাত, কোর্মা।
- চীনা: চা, চিনি, এলাচি, লিচু, সিন্দুর, সাম্পান।
- মায়ানমার (বর্মি): ফুঙ্গি, লুঙ্গি।
- জাপানি: রিক্সা, হারিকেন, হারাকিরি, জুডো, হাসনাহেনা, টাইফুন, সুনামি।
- মেক্সিকো শব্দ: চকোলেট। পেরুর শব্দ: কুইনাইন।
- হিন্দি শব্দ: পানি, ফালতু, দাদা, কাহিনী, আচ্ছা, খাম, ছিনতাই, টহল, বেটা, চানাচুর।
- জার্মান শব্দ: কিন্ডারগার্টেন, নাৎসি। ইতালিয়ান শব্দ: সনেট, ম্যাজেন্টা, মাফিয়া
- গ্রিক শব্দ: দাম, কোণ, কেন্দ্র, ইউনানি, সুরঙ্গ। সিংহলী শব্দ: বেরিবেরি, সিডর।
- মালয় শব্দ: কাকাতুয়া, কিরিচ, আইলা। দক্ষিণ আফ্রিকা শব্দ: জেব্রা।
- অস্ট্রেলীয় শব্দ: ক্যাঙ্গারু। তামিল শব্দ: চুরুট।
- মিশ্র শব্দ: চৌ-হদ্দি (ফারসি + আরবি), বেটাইম (ফারসি + ইংরেজি), খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি + তৎসম), হাট-বাজার (বাংলা + ফারসি), পকেটমার (ইংরেজি + বাংলা), হেড-মৌলভী (ইংরেজি + ফারসি), শাকসবজি (তৎসম + ফারসি), কালিকলম (বাংলা + আরবি), ডাক্তারখানা (ইংরেজি + ফারসি)। বি. দ্র. বাবা- তুর্কি; মা- তদ্ভব; খালা- আরবি; ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদী, মামা-মামি- হিন্দি শব্দ।
- আরও কিছু মিশ্র শব্দঃ আম্লজান (Oxygen), নথি (File), ব্যবস্থাপক (Manager), সচিব (Secretary), স্নাতকোত্ত (Post graduate), সাময়িকী (Periodical), উদমান (Hydrogen),
প্রশিক্ষণ (Training), বেতার (Radio), স্নাতক (Graduate), সমীকরণ (Equation), সমাপ্তি (Final)
শব্দ নিয়ে আজকে এই পর্যন্তই। হেলো বিসিএস এর সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
FAQs
এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ ধ্বনির সমষ্টিকে শব্দ বলে। অর্থই শব্দের প্রাণ। অর্থাৎ এক বা একাধিক বর্ণ মিলে কোনো অর্থ প্রকাশ করলে তাকে শব্দ বলে।
১) গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ ২ প্রকার।
২) অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ ৩ প্রকার।
৩) উৎসমূলক শ্রেণিবিভাগ ৫ প্রকার।
২ প্রকার।
১.মৌলিক শব্দ
২.সাধিত শব্দ
৩ প্রকার।
১.যৌগিক শব্দ
২.রূঢ়ি শব্দ
৩.যোগরূঢ় শব্দ
১.তৎসম
২.অর্ধ-তৎসম
৩.তদ্ভব
৪.দেশি
৫.বিদেশি
পঙ্কজ, মহাযাত্রা, রাজপুত, জলধি, সরোজ, ডাকাত ইত্যাদি যোগরূঢ় শব্দ।