বর্তমানে ব্যাংক জব বাংলাদেশের ক্যারিয়ার খাতের এক বিশাল সম্ভাবনার নাম। দেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ও ব্যাংকিং খাতে উন্নতি করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করছে। তাই প্রায়ই বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে জনবলের নিয়োগ দিয়ে থাকে। আর লাখো তরুণদের মধ্যে নিজের ব্যাংকিং স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিকল্পনামাফিক ব্যাংক জব প্রস্তুতি। আজকের আর্টিকেলে আমরা ব্যাংক জব লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবো।
ব্যাংক জব পরীক্ষা
বাংলাদেশ ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে জনবল নিয়োগ দেয়া হয় বলে পদভেদে এই সব ব্যাংক পরীক্ষার প্রস্তুতি আলাদাভাবে নিতে হয়। তবে এই মধ্যেও কমন বিষয় লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ ব্যাংকগুলোতে-
- প্রিলিমিনারি পরীক্ষা – ১০০ নম্বর
- লিখিত পরীক্ষা – ২০০ নম্বর
- ভাইভা পরীক্ষা – ২৫ নম্বরের হয়ে থাকে
ব্যাংক লিখিত পরীক্ষার মানবণ্টন
ব্যাংক লিখিত পরীক্ষার কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস ও মানবণ্টন নেই। তবে বিভিন্ন লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে দেখা যায় বাংলা, ইংরেজি ও গণিত থেকে ২০০ নম্বরের আসে। আর বলা যায় ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার এই ২০০ নম্বরই চূড়ান্ত চাবিকাঠি।
- বাংলা – ২৫-৩০ নম্বর
- ইংরেজি – ১০০ এর বেশি নম্বর
- গণিত – ৫০-৭০ নম্বর
ব্যাংক লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
লিখিত পরীক্ষার নম্বর ও সিলেবাস নির্দিষ্ট না থাকলেও বিগত বিভিন্ন পরীক্ষার প্যাটার্ণ দেখে বলা যায় সাধারণত বাংলা রচনা (২০-২৫), প্যাসেজ/অ্যাপ্লিকেশন (২০), ইংরেজি রচনা (৩০-৩৫), বাংলা এবং ইংরেজি অনুবাদ (৪০), গণিত (৩৫-৫০), সাধারণ জ্ঞান (৩০), টীকা (৩০-৩৫), প্রিসাইজ/সামারি (১৫) থেকে প্রশ্ন আসে।
ফোকাস রাইটিং বা রচনা
লিখিত পরীক্ষায় ফোকাস রাইটিং বা রচনায় সবচেয়ে বেশি নম্বর বরাদ্দ রয়েছে। সাধারণত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি ফোকাস রাইটিং থাকে। এই অংশে সমসাময়িক যে কোনো একটি বিষয়ের ওপর ফোকাস করে ‘পয়েন্ট বাই পয়েন্ট’ উত্তর লিখতে হয়।
ফোকাস রাইটিংয়ের ভূমিকা ও উপসংহার হতে হবে সংক্ষিপ্ত। তাছাড়া রচনার বৈশিষ্ট্য আলোচনা ও বিশ্লেষণ পরিণত হতে হবে। দ্রুত ও পরিষ্কার হাতের লেখার পাশাপাশি আকর্ষণীয় ও যথার্থ শব্দচয়ন চাকরিপ্রার্থীকে এগিয়ে রাখবে। ইংরেজি রচনার জন্য তিন পৃষ্ঠা এবং বাংলার জন্য চার পৃষ্ঠা লিখতে পারলেই যথেষ্ট বলা যায়। ঢালাওভাবে লেখার চেয়ে আপনার নিজস্ব সৃজনশীলতা ও সংক্ষেপে তথ্য উপস্থাপনের ধরন আপনাকে এগিয়ে রাখবে। সময়ও বাঁচাতে সাহায্য করবে।
ফোকাস রাইটিং এর প্রস্তুতিতে বাংলা ও ইংরেজি ভোকাবুলারি শিখার বিকল্প নেই। লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ডাটা, চার্ট, কোটেশন ব্যবহার করলে ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হয়। যত পারেন তত ডাটা, গ্রাফ, কোটেশন ব্যবহার করুন। কোটেশন, ডেটা, ছক দেওয়ার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পাঠের অভ্যাস করতে হবে।
দুটি ফোকাস রাইটিং লিখতে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট সময় নেওয়া যাবে। ফোকাস রাইটিংয়ে কমন না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি, তাই যেকোনো বিষয়ে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বুকলিস্ট (যেভাবে শুরু করবেন প্রস্তুতি)
প্যাসেজ
সাধারণত সমসাময়িক বা অর্থনৈতিক রিলেটেড ইংরেজিতে একটি প্যাসেজ দেওয়া থাকে। সেই প্যাসেজ থেকে ৪ থেকে ৫টি প্রশ্ন আসে। এর জন্য সাধারণত ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। পুরোটা প্যাসেজ পড়ার আগে প্রথমে প্রস্ন গুলো পড়বেন। তখন প্রশ্নের তথ্যগুলো বের করতে কিছুটা সহজ হবে। কোনোভাবে প্যাসেজ থেকে হুবহু কপি করা যাবে না। নিজের ভাষায় সুন্দর শব্দচয়নে প্যাসেজের লেখাটাকে প্যারাফ্রেইস করতে হবে।
আরগুমেন্ট রাইটিং
লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত ৩০ নম্বরের একটি আর্গুমেন্ট থাকবে। লেখার আগে একাধিকবার বিষয়টি ভালো করে পড়বেন। এখানে আপনি পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন। যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও উদাহরণ এর মাধ্যমে আপনার মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
কমপক্ষে ৪টি প্যারায় উত্তর করতে পারেন—সমস্যার স্বরূপ, পক্ষে যুক্তি, বিপক্ষে যুক্তি এবং সবশেষে পক্ষাবলম্বন। আবার খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো একপক্ষের প্রতি আপনার পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ না পায়। ৩ থেকে ৪ পৃষ্ঠার কাছাকাছি লেখতে পারেন। এতে ১৫ মিনিটের বেশি নিবেন না।
সুন্দরভাবে সংক্ষেপে আর্গুমেন্ট লেখার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতগুলো পড়তে পারেন এবং প্র্যাকটিস করতে করতে হবে। এই অংশে ভালো করার জন্য ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় অংশে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বিশ্লেষণ ও যুক্তিতর্ক অংশ পড়া যেতে পারে।
অনুবাদ
অনুবাস যেকোনো চাকরির লিখিত পরীক্ষার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এই অংশটি প্রায় সকল চাকরির লিখিত পরীক্ষায় আসে। তাই নিয়মিত অনুশীলন করে অনুবাদে দক্ষ হতে হবে।
ভালো প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, অর্থনীতি পাতা ও আন্তর্জাতিক পাতার সংবাদগুলো দেখে অনুশীলন করা যেতে পারে। প্রতিদিন একটি প্যাসেজ হলেও অনুবাদ প্র্যাকটিস করবেন । বিগত বছরের ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় আসে ট্রান্সলেশনগুলো অনুশীলন করতে পারেন। সাথে অন্যান্য বিভিন্ন লিখিত পরীক্ষার অনুবাদ অনুশীলন করতে পারেন।
প্রতিবেদন/দরখাস্ত
প্রতিবেদন বা দরখাস্ত ব্যবসায় সম্পর্কিত বেশি পরীক্ষায় আসতে দেখা যায় । আর অনেকেই পরীক্ষার আগে অনুশীলন না করে যাওয়ায় পরীক্ষাকেন্দ্রে সঠিক ফরম্যাট অনুযায়ী লিখতে পারেন না। অথচ একটু চেষ্টা করলেই এই অংশে নিশ্চিত নম্বর পাওয়া যায়। কেননা অন্যান্য অংশের চেয়ে এই অংশ তুলনামূলক সহজ।
সহজ ভেবে হেলাফেলা করলে কঠিন হয়ে যায়। এর জন্য বিগত সালে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে আসা প্রতিবেদন বা দরখাস্ত দেখে অনুশীলন করুন। মূলত লেখার ফরম্যাট শেখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
বেশ কয়েক ধরনের প্রতিবেদন বা দরখাস্ত লিখতে আসে। তাই সব ধরনের প্রতিবেদন বা দরখাস্ত লেখা অনুশীলন করুন। প্রতিবেদন বা দরখাস্ত এক পৃষ্ঠা লিখলেই যথেষ্ট।
আরও পড়ুনঃ ৪৬ তম বিসিএস প্রস্তুতি : ৪৬ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি ২১০ দিনে যেভাবে নিবেন (46 BCS preparation)
সামারি/প্রিসিস রাইটিং
সামারি/প্রিসিস রাইটিং এর ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে মূল প্যাসেজের ১ / ৩ অংশের সাইজে লিখতে পারেন । এতে বানান ও গ্রামার ভুল না করলে ভালো নম্বর পেতে পারেন।
টীকা
ব্যাংকের চাকরির লিখিত পরীক্ষায় টীকা বা শর্ট নোটস লিখতে আসতে দেখা যায়। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর টীকা লিখতে আসে। সংক্ষিপ্ত আকারে এগুলোর উত্তর দিতে হয়।
গণিত
লিখিত পরীক্ষায় পার্থক্যসৃষ্টিকারী বিষয় হল গণিত। তবে অনেকে গণিতে তুলনামূলক কম নম্বর পেয়েও অন্যান্য অংশে ভালো করে চাকরি পেয়েছেন।
গণিতের প্রস্তুতির জন্য বাজারের প্রচলিত ভালো মানের এক বা একাধিক বই অনুসরণ করুন। গণিতে ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই। বিগত সালে বিভিন্ন ব্যাংকে আসা প্রশ্নের গণিতগুলো চর্চা করুন।
গণিতে অতিরিক্ত সময় দিলে অন্যান্য অংশ লেখার জন্য কম সময় পাওয়া যাবে। গণিতে ভালো দক্ষ না হলে সবার শেষে উত্তর করা ভালো। গণিতের ৫০ শতাংশ প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ আসে। যাঁরা গণিতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তারা এটা মনে রেখে একটু মাথা খাটালেই পারবেন।
সাধারণ জ্ঞান
চাকরি পেতে হলে এই অংশে ভালো করার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের বই থেকে পড়বেন। এই অংশে ১০-১২ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করা উচিত নয়।
ব্যাংক জব পরীক্ষার পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন।
লিখিত প্রস্তুতির কিছু টিপস
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ সময়ে এসে নিতে কিছু টিপস জেনে নিন।
- গণিত প্রস্তুতির বিগত বছরের লিখিত প্রশ্ন সমাধান করা যেতে পারে।
- সাধারণ জ্ঞানের জন্য চার-ছয় মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভালো মত পড়তে হবে।
- কমপক্ষে দিনে চার-পাঁচটি অনুবাদ এবং দুই-তিনটি কম্প্রিহেনশন/
- প্যাসেজ অনুশীলন করতে হবে।
- লেটারের ফরম্যাটগুলো ভালোমতো দেখে নিতে হবে। কারণ এগুলোর ফরম্যাট ঠিক থাকলেই গড় নম্বর পাওয়া যায়।
- সামারি/প্রিসাইজে টাইটেলের বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে। প্রশ্নে টাইটেল দিতে বললে টাইটেল দেব। অন্যথায় সামারিতে টাইটেল দিতে হয়, প্রিসাইজে টাইটেল দেওয়ার দরকার নেই।
ব্যাংক লিখিত পরীক্ষা সাধারণত ২ ঘন্টা হয়ে থাকে। এমসিকিউ পরীক্ষার রেজাল্ট এর পর লিখিত পরীক্ষার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায় না। তাই অল্প সময়ে সঠিক পরিকল্পনা অনুসারে লিখিত প্রস্তুতি নিতে হয়। ব্যাংকের লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আজ এই পর্যন্তই ।