বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে গেরিলাযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আর.-কে হত্যা করে এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালিদের তৎকালীন জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
অসহযোগ আন্দোলন
বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ভাষণের সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল— পূর্ব পাকিস্তানের অসহযোগ আন্দোলন।
ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন— ৩রা মার্চ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ (১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর)।
ইয়াহিয়া খান অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন— ০১ মার্চ। প্রতিবাদে হরতাল পালিত হয়— সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারা দেশে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বিশাল এক জনসভায় ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সকল বাঙালিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে আহ্বানে জানান।
অসহযোগ আন্দোলন- চূড়ান্ত পর্যায়
- ০১ মার্চ, ১৯৭১ ইয়াহিয়া খান অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন।
- ০২ মার্চ, ১৯৭১ বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করেন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়)— আ.স.ম. আব্দুর রব। এ কারণে ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
- সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে— মালিবাগের আবু জর গিফারী কলেজের ছাত্র ফারুককে (মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ)। তাকে রামপুর আইল্যান্ডে দাফন করা হয়। একই দিনে শহীদ হন— রংপুরের শঙ্কু সমজদার।
- ০৩ মার্চ, ১৯৭১ ডাকসুর ভিপি আ.স.ম. আব্দুর রব বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবকে উপাধি দেন— ‘জাতির জনক’। ইকবাল হলের নাম হয়— সার্জেন্ট জহুরুল হক হল।
- ০৪ মার্চ, ১৯৭১ পাকিস্তান রেডিওর নাম করা হয়— ‘বাংলাদেশ বেতার’ এবং পাকিস্তান টিভির নাম— বাংলাদেশ টিভি।
- ০৬ মার্চ, ১৯৭১ ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে ২৫শে মার্চ পুনরায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারেনি।
৭ মার্চের ভাষণ ও পরের অবস্থা
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরদিন থেকে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়াদী উদ্যানে) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন। এ সময়ও পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল।
- ১৬ মার্চ অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রেখে ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা শুরু হয়।
- ২২ মার্চ ভূট্টো ঢাকায় আসেন এবং আলোচনায় অংশ নেন।
- ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ দিনটি আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে।
- ২৪ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সংকট সমাধানের শেষ চেষ্টা করেন।
- ২৫ মার্চ আলোচনা অসমাপ্ত রেখে ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার আগে তিনি সামরিক বাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়ে যান।
- ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে ১:৩০ টায় গ্রেফতার করা হয়। ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের পাঁচজন বিখ্যাত কবি
০৭ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অভিমত
আবদুল ওয়াহাব — বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: ফোকলোর ও মানবতার জয়গান।
মুস্তাফা নূরুল ইসলাম — ৭ মার্চ : বাঙালির স্বরুপে উদ্ভাসের দিন।
হাসনাত আবদুল হাই — সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা।
আতিউর রহমান —- সেই কবি, সেই কবিতা।
তোফায়েল আহমেদ— নিরস্ত্র বাঙালির সশন্ত্র জাতিতে রূপান্তর হওয়ার প্রেরণা।
এম সাইদুর রহমান খান — বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র।
এ বি এম মুসা– সেই দিন, সেই ভাষণে। সাতই মার্চের যুদ্ধ ঘোষণা।
আবুল মোমেন– কালোত্তীর্ণ ভাষণটি বাঙালির জাতির অনন্ত প্রেরণা।
কে বি এম মুফিজুর রহমান খান—বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : ইতিহাসের এক মহাকাব্য।
হারুণ হাবীব — ৭ মার্চ, আরেক ‘মনুমেন্ট’।
সৈয়দ শামসুল হক— সেই আর্তনাদের ইতিহাস।
যতীন সরকার — ৭ মার্চ : অবিনাশী কথামালার জন্মদিন।
৭ই মার্চের ভাষণঃঐতিহাসিক দলিল
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে— জাতিসংঘের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘UNESCO’.ইউনেস্কের (UNESCO) মেমোরি অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড চালু করে— ১৯৯২ সালে।
UNESCO তার Memory of the World (MOW) কর্মসূচির অধীনে আন্তর্জাতিক তালিকায় (ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রার)বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটিকে মনোনয়ন দিয়েছে —International Advisory Committee কর্তৃক মোট ৭৮টি দলিলের মধ্যে ৪৮ নম্বরে।
বিসিএস, প্রাইমারি,নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এনরোল করুন।
২৫ মার্চের স্বাধীনতার গণহত্যা ও স্বাধীনতার ঘোষণা
২৫ মার্চ ১৯৭১ রাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে ঘৃণ্য, বর্বর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয় ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড। সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস এই ঘটনাকে ‘বিশ শতকের জঘণ্যতম প্রবঞ্চনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পূর্বেই স্বাধীনতার বার্তা প্রেরণ করেন ঘোষণার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীকে।
গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে (২৫ মার্চ, ১৯৭১ রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং চট্টগ্রাম প্রেরণ করেন— ওয়ারলেসযোগে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী হবার পূর্বেই এ ঘোষণাটি টি.এন্ড.টি ও ই.পি.আর (বর্তমান বি.জি.বি)-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পৌঁছে দেন। স্বাধীনতার ঘোষণাটি ছিল— ইংরেজিতে (যাতে বিশ্ববাসী বুঝতে পারে)।
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বেতারযন্ত্র (ট্রান্সমিটার) স্থাপন করেন— বুয়েটের অধ্যাপক ড. নুরুল।
স্বাধীনতার এ ঘোষণা বাংলাদেশের সকল স্থানে তদানীন্তন ইপিআর এর ট্রান্সমিটার, টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী করার প্রক্রিয়ার নাম ছিল— “অপারেশন বিগ বার্ড”।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবিগণ
স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ ও প্রচার
- সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন— ২৬ মার্চ প্রায় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান।
- ২৬ মার্চ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সন্ধ্যা ৭:৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন— আবুল কাশেম সন্দীপ।
- বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি বিবিসির প্রভাতী অধিবেশনে প্রচারিত হয়— ২৬ মার্চ।
- বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন— ২৭ মার্চ অপরাহ্ণে কলুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে।
বাংলাদেশের জাতীয় দিবস/স্বাধীনতা দিবস— ২৬ মার্চ। [২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে]
স্বাধীনতার ঘোষকঃ বঙ্গবন্ধু
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক।
২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তা আমেরিকার ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির রিপোর্টে লিপিবদ্ধ আছে।
জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও দলিলপত্র সম্পাদনা করেন হাসান হাফিজুর রহমান। এই গ্রন্থের ৩য় খন্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন’।
‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক’ সুপ্রিম কোর্ট এই রায় প্রদান করেন— ২১ জুন, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগ
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র
পাকিস্তানের সৈন্যদের হাতে সকল রেডিও স্টেশন চলে যায়— ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে।
চট্টগ্রামের কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র হতে যন্ত্রপাতি স্থানান্তরিত করে চট্টগ্রামের কালুরঘাট প্রেরণ কেন্দ্রটিকে বেতার কেন্দ্রহিসেবে গড়ে তোলেন। এর নাম দেওয়া হয়— “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র ”।
১৯৭১ সালের ২৮শে মার্চ বিপ্লবী শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয়— ‘‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’’।
১৯৭১ সালের ৩০শে মার্চ –হানাদার বাহিনীর বোমা বর্ষণের ফলে বেতার কেন্দ্রটি নিরব হয়ে যায়।
কলকাতার বালিগঞ্জে বেতার কেন্দ্রটি ২য় পর্যায়ে সম্প্রচার শুরু করে— ১৯৭১ সালের ২৫মে।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করা হয়— স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি অনুষ্ঠান ছিল— জল্লাদের দরবার ও চরমপত্র। স্থানীয় ঢাকাইয়া ভাষায় ‘চরমপত্র’।পাঠ করেন— এম আর আখতার মুকুল। চরমপত্রটির সিরিজটির পরিকল্পনা করেন— জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল মান্নান।
জেনারেল ইয়াহিয়া খানের অমানবিক চরিত্র ও পাশবিক আচরণকে কেল্লা ফতেহ খান চরিত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়— জল্লাদের দরবারে।
‘বজ্রকণ্ঠ’— এ বেতার কেন্দ্রকর্তৃক প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অংশ বিশেষ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এ নামে প্রচারিত হতো।
১৯৭১ সালে রথীন্দ্রনাথের ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা। তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা- গানটি স্বাধীন বাংলা বেতারে খুব বাজানো হত।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ছিল—সাপ্তাহিক ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকা। এর সম্পাদক ফজলুল হক মণি।
আরও পড়ুনঃ বাংলা সাহিত্য কবি জসীম উদ্দিন এর অবদান
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও মুজিবনগর প্রশাসন
১০ এপ্রিল,১৯৭১
ঘোষিত হয়— ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার আদেশ’।
মুক্তিযুদ্ধ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত হয়— বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার)।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়— মেহেরপুরের ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার মুজিবনগরের আম্রকাননে। মুজিবনগর নামকরণ করেন— তাজউদ্দিন আহমদ। সরকারের প্রকৃতি ছিল— রাষ্ট্রপতি শাসিত।
মুজিবনগর সরকারের কার্যকারিতা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়— Charter of Independence মোতাবেক।
১০ এপ্রিলে জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন— অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
১৭ এপ্রিল,১৯৭১
মুজিবনগর দিবস পালিত হয়— ১৭ এপ্রিল।
‘প্রবাসী সরকার’ (Government of Excile) শপথ গ্রহণ করে।
- মুজিবনগর সরকার গঠনের সময়— মেহেরপুর ছিল পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে।
- প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ক্যাম্প ছিল— ভারতের কলকাতাস্থ ৮নং থিয়েটার রোডে।
- ঘোষণাপত্রের বর্ণনা অনুযায়ী এটি কার্যকর হয়— ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ।
- প্রথম গার্ড অব অনার দেন— তৎকালীন চুয়াডাঙ্গার সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার মাহবুবুর রহমান (বীর প্রতীক)।
- জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন— মোঃ আসাদুল হক, সাহাবউদ্দীন আহমেদ সেন্টু ও পিন্টু বিশ্বাস।
- স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ৪ জনের নাম আছে। যথা— জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ইউসুফ আলী এবং আইয়ুব খান। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করেন— ব্যারিস্টার এম আমির-উল-ইসলাম।
- মুজিবনগর সরকারের বৈধতা— বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম তফসিল অনুযায়ী ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’।
- মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাজধানীর নাম— মুজিবনগর (১৭ ই এপ্রিল- ১৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)।
- মুজিবনগর সরকারের পরিসমাপ্তি ঘটে— ১২ ই জানুয়ারি, ১৯৭২।
- মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের ২৩টি ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল এর অর্থ- ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের স্থপতি—স্থপতি তানভির করিম।
মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল ৫টি রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে। যথা—
- আওয়ামী লীগ
- ন্যাপ (ভাসানী)
- ন্যাপ (মোজাফফর)
- বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস
- বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি
মুজিবনগর সরকার ছিল সংসদীয় পদ্ধতির। এক নজরে মুজিবনগর সরকারের প্রশাসন—
ব্যক্তির নাম ——- দায়িত্ব ও পদমর্যাদা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক)—– রাষ্ট্রপতি (পাকিস্তানের কারাগারে আটক)।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম —— উপ-রাষ্ট্রপতি/ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।
তাজউদ্দীন আহমদ —— প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, তথ্য ও বেতার শিক্ষা, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ, শ্রম, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ।
এ এইচ এম কামারুজ্জামান —-স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়।
ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী —– অর্থ, জাতীয় রাজস্ব, বাণিজ্য, শিল্প ও পরিবহন মন্ত্রণালয়
খন্দকার মোশতাক আহমদ —— পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
কর্নেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী —– প্রধান সেনাপতি/ সেনাবাহিনীর প্রধান (মন্ত্রীর পদমর্যাদা)
লে. কর্নেল রব এম এন এ—-উপদেষ্টা (চীফ অব আর্মি স্টাফ)
ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার —— উপ-সেনাপ্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান
- মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন— অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী ও আব্দুল মান্নান।
- মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রণালয় ছিল— ১২টি।
আরও পড়ুনঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য
মুজিবনগর সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (সভাপতি)- ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী)
কমরেড মনি সিংহ (সভাপতি)- বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি
অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ (সভাপতি)- ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ- মোজাফফর)
শ্রী মনোরঞ্জন ধর (সভাপতি)- বাংলাদেশ জাতীয় কংগেস
তাজউদ্দীন আহমদ (প্রধানমন্ত্রী)- বাংলাদেশ সরকার
খন্দকার মোশতাক আহমদ (পররাষ্ট্রমন্ত্রী)- বাংলাদেশ সরকার
কূটনৈতিক মিশন
প্রথম কূটনৈতিক মিশন স্থাপিত হয়— কলকাতাতে।
মুজিবনগর সরকারের প্রতি ১৮ই এপ্রিল, ১৯৭১খ্রি. সালে প্রথম আনুগত্য প্রকাশ করেন— পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার এম হোসেন আলী। তিনি কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। এ মিশনে এম হোসেন আলী কোন বিদেশি মিশনে সর্বপ্রথম বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন যুক্তরাষ্ট্র মিশনের প্রধান ছিলেন— এম আর সিদ্দিকী, যুক্তরাজ্যের— বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী এবং নয়াদিল্লির— হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ।
৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতি নিতে এনরোল করুন।
মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল
সামরিক প্রশাসন
তেলিয়াপাড়া রণকৌশল : ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সামরিক বাহিনীর বাঙালি আনসার, পুলিশ,সেনা, রাইফেল’স এর সদস্যরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে আক্রমণের যে পরিকল্পনা করে তাকে তেলিয়াপাড়া রণকৌশল বলে।
নিয়মিত বাহিনী : ১০ জুলাই, ১৯৭১ থেকে ১৭ ই জুলাই ১৯৭১ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যুদ্ধ অঞ্চলের অধিনায়কদের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তাতে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রচলিত মতে, ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের নির্দেশে ওসমানী বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন।
- ১০ই এপ্রিল সরকার— ৪টি সামরিক জোনে বাংলাদেশকে ভাগ করে ৪ জন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করে। ১১ই এপ্রিল তা পুনর্গঠিত করে— ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।
- মুক্তিযুদ্ধে নৌপথ ও সমুদ্র এলাকা— ১০নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এ সেক্টরে নিয়মিত কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না।
- মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর ছিল— ৬৪টি। ১০টি সেক্টরে মোট সেক্টর প্রধান ছিলেন—১৬ জন।
ব্রিগেড ফোর্স
১৯৭১ সালের ২১ জুলাই মন্ত্রিসভার (প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিনায়কের নামের আদ্যাক্ষরের ভিত্তিতে জুলাই, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর থেকে তিনটি নিয়মিত ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়।
ফোর্সের নাম— প্রধানের নাম— প্রতিষ্ঠা— হেড কোয়ার্টার
Z – Force —মেজর জিয়াউর রহমান— ১ অক্টোবর, ১৯৭১— ফটিকছড়া
S – Force — মেজর কে এম শফিউল্লাহ— ৭ জুলাই, ১৯৭১— তেলদহ
K- Force — মেজর খালেদ মোশাররফ— ৭ অক্টোবর, ১৯৭১ —মেলাঘর
অনিয়মিত বাহিনী
- বি এল এফ (মুজিব বাহিনী)
- কাদেরিয়া বাহিনী
- আফসার ব্যাটেলিয়ন
- জিয়া বাহিনী বাতেন বাহিনী
- হেমায়েত বাহিনী
- আকবর বাহিনী
- হালিম বাহিনী
- রফিক মির্জা বাহিনী
মুক্তিফৌজ : ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল কর্নেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ার চা বাগানে মুক্তিফৌজ গঠিত হয়।
মুজিব ব্যাটারী : স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে ১৯৭১ সালের ২২ জুলাই ভারতের কোণাবনে গঠন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম গোলন্দাজ ইউনিট মুজিব ব্যাটারি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছয়টি কামান নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়।
যৌথ বাহিনী : ২১ নভেম্বর, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী ও ভারতের সেনাবাহিনী মিলে যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়।
মিত্রবাহিনী প্রধান ছিলেন ভারতে সেনাবাহিনী প্রধান শ্যাম মানেক শ এবং অধিনায়ক ছিলেন ভারতীয় সেনবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
গণবাহিনীঃ মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল গণবাহিনীর। যার সদস্য সংখ্যা ছিল ৮০,০০০।
ক্র্যাক প্লাটুনঃ
ক্র্যাক প্লাটুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঢাকা শহরে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একদল তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত দল। ক্র্যাক প্লাটুন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে খালেদ মোশাররফ।
বিমান বাহিনীঃ বিমানবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ.কে. খন্দকার প্রবাসী সরকারের নির্দেশনায় ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী’ গঠন করেন— ২৮ সেপ্টম্বর, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়— ১৮ জন পাইলট এবং ৭০ জন বৈমানিক নিয়ে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রদান করে— একটি অটার, একটি অলওয়েট হেলিকপ্টার এবং একটি ডিসি-৩ ডাকোটা বিমান।
নৌবাহিনীঃ দুটি গানবোট ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ সমন্বয়ে বাংলাদেশ নে․বাহিনী গঠিত হয়— ১২ অক্টোবর, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে।
‘বঙ্গবন্ধু’ নৌবহর উদ্বোধন করা হয়— ৯ নভেম্বর, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। নৌ কমান্ডো কর্তৃক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিকট থেকে ৬টি নৌযান দখল করে এ নৌবহর উদ্বোধন করা হয়।
‘পলাশ’-এর উপরে পাকিস্তানি জাহাজ থেকে ছোঁড়া বোমা বর্ষণে শহীদ নয়— ইঞ্জিন আর্টিফিশার মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অভিযান
২১ নভেম্বর — বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথ বাহিনী গঠন করে। এজন্য ২১শে নভেম্বর-এ সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়।
০১ ডিসেম্বর —- বেসরকারি পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা দিবস।
০৩ ডিসেম্বর —- পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করলে সেদিনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
০৬ ডিসেম্বর —- যৌথবাহিনীর আক্রমনে পাকিস্তানের সবকটি বিমান ধ্বংস হয়ে যায়।
১০ ডিসেম্বর — নিরপেক্ষ এলাকা ঘোষণা করা হয় হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালকে। এটিতে ঢাকাস্থ কূটনীতিক ও বিদেশি নাগরিকদের আশ্রয় প্রদান করা হয়।
১৪ ডিসেম্বর— আলবদর বাহিনী ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী উভয়ে মিলে বাঙালির তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে।
১২ মার্চ, ১৯৭২—- মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা এ দেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক, সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মরণে আমরা প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করি।
শহীদ ব্যক্তিবর্গঃ
ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, সাহিত্যিক আনোয়ার পাশা, সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরী, ডা. গোলাম মর্তুজা, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, শহীদুল্লাহ কায়সার, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, ডা. আজহারুল হক, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক সন্তোষ চন্দ্র, অধ্যাপক রশীদুল হাসান।
আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিল
ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক মিত্রবাহিনীর নিকট ৯১,৫৪৯ জন সৈন্যসহ আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিল স্বাক্ষরিত হয়— ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর (১৩৭৮ বঙ্গাব্দ)।
শীতের পড়ন্ত বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে লেঃ জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী, সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি এবং কমান্ডার ইস্টার্ন কমান্ড (পাকিস্তান) মিত্রবাহিনীর কাছে ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষর করেছেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে খন্দকার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন গণবাহিনীর পক্ষে কাদের সিদ্দিকী, ভারতীয় নৌবাহিনীর ভাইস এডমিরাল কৃষ্ণ, ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার মার্শাল দেওয়ান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে.জে. জেএফআর জ্যাকব।
- প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা— যশোর, ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ।
মুক্তিযুদ্ধের খেতাব
স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইউনিট, সেক্টর, ব্রিগেড থেকে পাওয়া খেতাবের জন্য সুপারিশসমূহ এয়ার ভাইস মার্শাল এ. কে খন্দকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি দ্বারা নিরীক্ষা করা হয়।
এরপর ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেতাব তালিকায় স্বাক্ষর করেন।
বীরশ্রেষ্ঠদের উপাধি দিয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশ করে— ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ সাল। অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচিত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে খেতাব প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে মোট ৬৭৬ জনকে চার ধরনের খেতাব প্রদান করা হয়। ধারাবাহিকভাবে খেতাবসমূহের নাম— বীরশ্রেষ্ঠ (৭ জন), বীর উত্তম (৬৮ জন), বীর বিক্রম (১৭৫ জন), বীর প্রতীক (৪২৬ জন)।
তবে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ৪ খুনির খেতাব স্থগিত করায় মোট খেতাবপ্রাপ্ত সর্বমোট মুক্তিযোদ্ধা ৬৭২ জন।
বাংলাদেশের কোনো জীবিত ব্যক্তিকে প্রদত্ত সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব— বীর উত্তম।
- খেতাবপ্রাপ্ত প্রথম বীরউত্তম— লে. কর্নেল আবদুর রব (চিফ অব স্টাফ)।
- খেতাবপ্রাপ্ত প্রথম বীরবিক্রম— মেজর খন্দকার নাজমুল হুদা। খেতাবপ্রাপ্ত প্রথম বীরপ্রতীক— মোহাম্মদ আব্দুল মতিন।
- খেতাবপ্রাপ্ত প্রথম নারী বীরপ্রতীক— ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম।
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের তিন ধরণের সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। যথা- বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা, বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা।
বাংলাদেশের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে নিয়ে আজকে এই পর্যন্তই।
Hello BCS এর সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।