দিন দিন চাকরির প্রতিযোগিতা বেড়েই চলছে। একটি পদের বিপরীতে লড়াই করে হাজার হাজার প্রার্থী। সেই একটি পদের চাকরির জন্য অনেকেই যোগ্য থাকেন। যোগ্যদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা হয়। তাই অনেকের মধ্যে একজন হওয়ার লড়াইয়ে নিজেকে তুলে ধরতে হয় একটু আলাদাভাবে।
আজকের আর্টিকেলে বিসিএস/ব্যাংক/প্রাইমারি সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষায় ভাইভার প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে সেই সম্পর্কে জানব।
বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি (BCS Viva Preparation)
বিসিএস পরীক্ষা তিনটি ধাপের মধ্যে ৩য় ধাপ হচ্ছে ভাইভা। ভাইভাতে ২০০ নম্বর থাকে। যদি ভাইভায় সিলেক্ট হতে পারেন তবে আপনার চাকরি নিশ্চিত । ভাইভার পরিপূর্ণ প্রস্তুতির জন্য অনেক আগে থেকেই নিজেকে তৈরি করতে হবে। কারণ ভাইভার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তাই অনেক ধরনের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে__
১. ভাইভার দিনের প্রস্তুতিঃ আপনার ভাইভা যেদিন অনুষ্ঠিত হবে সেই দিনটির বাংলা তারিখ,বাংলা মাসের নাম, বাংলা সাল, আরবি তারিখ, মাসের নাম, আরবি সাল সম্পর্কে জানতে হবে। ওইদিন শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি, বাংলা পত্রিকাগুলোর প্রধান শিরোনাম কি কি সেগুলো জানতে হবে। ওই তারিখে ঐতিহাসিকভাবে কোন ঘটনা থাকলে সম্ভব হলে সেই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখা।
২.নিজের সম্পর্কে জানাঃ জন্মসাল, ভাইভার তারিখে বয়স, নিজের নামে কোনো বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ব্যক্তি থাকলে তার সম্পর্কিত তথ্য,আপনার জেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থান। স্থানটি কেন বিখ্যাত? নিজ পরিবার, বাবা ও মায়ের পেশা, নিজের ভালো ও খারাপ দিক, শখ, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।
৩. অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে জানাঃ আপনি যে বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন তার পঠিত বিষয়গুলো, বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অথবা প্রতিষ্ঠান প্রধান, প্রথম ভিসি, প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকাল ইত্যাদি। আপনার পঠিত বিষয়ের ওপর মৌলিক ধারণা নিয়ে রাখবেন।
৪. নিজের পরিচয় দেওয়ার প্রস্তুতিঃ ভাইভা বোর্ডে নিজের পরিচয় দেয়ার যোগ্যতা অর্জন জরুরি। আপনাকে ‘describe about yourself’ বললে অবশ্যই ইংরেজিতে বর্ণনা করবেন। অন্যথায় বাংলা অথবা ইংরেজি যে কোনো মাধ্যমে করতে পারেন।
৫. জব এক্সপেরিয়েন্সঃ আপনি আগে কোথাও চাকরি করছেন কি না? করে থাকলে এখন করেন কি না ? আর যদি চাকরি ছেড়ে দেন ছেড়ে দেওয়ার কারণ কি সেই সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
৬. ইতিহাস সম্পর্কে ধারণাঃ বাংলাদেশে ইংরেজদের শাসনকাল, দেশের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে।
৭. মুক্তিযুদ্ধঃ ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট, ১৯৬৬ ছয় দফা, ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বিভিন্ন ঘটনাসহ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
৮. বর্তমান সরকার ও মন্ত্রীপরিষদঃ বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জসমূহ কি কি। মেগা প্রজেক্টের নাম, বর্তমান সরকারের বড় অর্জন কি কি? দেশে বিভাগ ও জেলার সংখ্যা কত? মন্ত্রিদের নাম সমূহ এবং কে কোন দায়িত্ব পালন করেন সেই সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা।
৯. সাম্প্রতিক বিশ্ব ও ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিষয়সমূহঃ নিয়মিত পত্রিকা পড়া সহ, সমসাময়িক দেশে বিদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে আপডেট থাকার চেষ্টা করুন। ভাইবার তারিখ প্রকাশের পর নিয়মিত আন্তর্জাতিক বিষয়, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দিকে নজর রাখবেন। তাছাড়া ভাইভার আগে ২-৩ টা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ে ফেলতে পারেন। ভাইভা পরীক্ষার দিন পত্রিকার সব হেডলাইনগুলো দেখে যেতে পারেন।
১০. নিজ পছন্দের ক্যাডার সম্পর্কে যুক্তি উপস্থাপনঃ আপনার পছন্দক্রমের ১,২,৩,৪,৫ ক্যাডার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখবেন। যেমন আপনার ১ম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রশাসন কেন আপনার প্রথম পছন্দ সেই বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
১১. নিজের পোশাক এবং ব্যক্তিত্বে নজর দেওয়াঃ যেকোনো চাকরি ভাইভায় ড্রেসকোড হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। ভাইভা বোর্ডে আপনার সঙ্গে যায় না এমন পোশাক পরবেন না। নিজেকে খুব স্মার্ট দেখানোর প্রয়োজন নেই। রং-বেরঙয়ের উজ্জ্বল পোশাক পড়া বোকামি। সাবলীল কাপড় পড়বেন। মেয়েরা পোশাক হিসেবে হালকা রঙয়ের শাড়ি, আর ছেলেরা কালো অথবা এক রঙয়ের প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরবেন ।
ব্যাংক ভাইভা প্রস্তুতি (Bank Viva Preparation)
ব্যাংক এর ভাইভা পরীক্ষায় ২৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। যেহেতু প্রতিটি ভাইভার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় প্রশ্ন করা হয় যেমন নিজের সম্পর্কে বলুন, নিজের এলাকা সম্পর্কে বলুন, শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বলুন ইত্যাদি। এগুলো সব কমন প্রশ্ন। ব্যাংক ভাইভার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং, অর্থনীতির মৌলিক বিষয় , ব্যাংকিং সেক্টর, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং টার্মস ও চয়েজ এই বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষক নিবন্ধন প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন
প্রাইমারি শিক্ষক ভাইভা প্রস্তুতি(Primary Teacher Viva Preparation)
সরকারি প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভাইভা হয় ২০ নম্বরের ওপর। ভালো একাডেমিক ফলাফল থাকলে শিক্ষাগত যোগ্যতায় ১০ নম্বর দিয়ে থাকে। ভাইভাতে একজন প্রার্থী আত্মবিশ্বাসের সাথে স্মার্টলি উত্তর দিচ্ছে কি না সেই বিষয়ে খেয়াল করা হয়।
মৌলিক কিছু প্রশ্নঃ– Introduce yourself, নামের অর্থ কি? নিজের সম্পর্কে বলুন/ নিজের সম্পর্কে পাঁচ মিনিট ইংরেজিতে বলুন? আপনার বংশীয় পদবি কি? বংশীয় পদবির অর্থ কি? নিজের সম্পর্কে ভালো এবং খারাপ গুণ বলুন? অবসর সময়ে কি করেন? প্রিয় কবি কে? কেন তিনি আপনার প্রিয় কবি? সম্প্রতি পড়া বইয়ের নাম বলুন? কোন স্কুল/ কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন? জিপিএ ও সিজিপি এর মধ্যে পার্থক্য কি? জিপিএ/ সিজিপিএ ফুল ফর্ম কি? অনার্স কোন সাবজেক্টে ছিল? সেই সাবজেক্টের জনক কে? ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
ট্রান্সলেশন জিজ্ঞেস করা হয়। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়, সাম্প্রতিক বিষয়, বিশ্বের চলমান বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিতঃ– প্রাথমিক শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি ট্রেনিং এর কি নাম? কত সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ শুরু হয়? বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয় কবে? পিটিআই এর প্রধান কে? প্রাথমিক ডিজির নাম কি? কেন প্রাইমারি টিচার হতে চান? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে প্রাইমারি টিচার হতে চান কেন? বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন? স্কুলে হেড টিচার না থাকলে, তখন বাচ্চারা মারামারি করলে আপনি কি করবেন?পূর্ণরূপ বলুন (MOPME, NAPE, DPEd, URC, BANBEIS, NCTB, IPEMIS)? লিখিত পরীক্ষা কেমন হয়েছে কত নম্বর পাওয়ার আশা রাখেন?
৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতি নিতে এখনই এনরোল করুন।
চাকরি পরীক্ষায় ভাইভার কিছু টিপস (Viva Preparation Tips)
যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষায় অন্যতম আতংকের নাম হচ্ছে ভাইভা। হোক সেটা বিসিএস, ব্যাংক কিংবা অন্য যেকোনো ধরনের চাকরি। ভাইভা আসলে একটা ভাগ্যের খেলা। ভাগ্য যদি আপনার সাথে থাকে তাহলে আপনি হিরো না থাকলে জিরো। তারপরও ভাইভা বোর্ডে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি যদি ভালো থাকে তবে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। যেকোনো কাজের অর্ধেকের বেশি সাফল্য নিয়ে আসে এই আত্মবিশ্বাস।
ভাইভার কয়েকটি টিপসঃ-
১.ভাইভার আগের রাত্রে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিন। সম্ভব হলে আগের পড়াগুলো রিভিশন দেন।
২.টেনশন মুক্ত থাকুন। দুশ্চিন্তা করবেন না।
৩.নিজের সম্পর্কে, নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান ও সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যাবেন।
৪. ফরমাল ড্রেস পড়ে যাবেন। আগে থেকে প্রয়োজনীয় সব জিনিসগুলো ঘুচিয়ে রাখুন।
৫. সময়ের আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন। নির্দিষ্ট সময় হাতে রেখে বাসা থেকে বের হবেন।
৬. ভাইভা বোর্ডে অনুমতি নিয়ে সালাম/আদাব দিয়ে প্রবেশ করবেন। বোর্ডে মেম্বার সংখ্যা বেশি থাকলে প্রয়োজনে আবার সালাম/আদাব দিয়ে সবার সাথে আই কন্টাক্ট করবেন । ডোকার পরেই বসে পরবেন না। বসতে না বললে দাড়িয়ে থাকবেন।প্রায় ১ মিনিটের বেশি হয়ে গেলে বোর্ড চেয়ারম্যান সদস্যদের অনুমতি নিয়ে বসবেন। মাস্ক পড়া থাকলে মাস্ক খুলতে বলার আগ পর্যন্ত খুলবেন না।
৭. বাংলাতে নিজের সম্পর্কে বলতে বললে বাংলাতেই বলবেন। নিজে থেকে ইংরেজি বলতে যাবেন না।
৮. ভাইভাতে গণিত বিষয়ে কোন প্রশ্ন করা হলে ভালোভাবে হিসেব করে উত্তর দিবেন। বেশি সময় নেওয়া যাবে না।
৯. কোন প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে “এই মুহূর্তে জানা নেই স্যার” অথবা “জানি না স্যার” বলতে হবে। কোনো তর্ক করা যাবে না। ভাইভা বোর্ডে কতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন সেটা দেখা হয় না। বরং আপনি ভাইভা সেশনটি কীভাবে হ্যান্ডেল করছেন সেই বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করা হয়।
১০.অধিক পাণ্ডিত্য জাহির করা যাবে না। অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখাবেন না।
১১. আঞ্চলিকতা পরিহার করুন। শুদ্ধ বাংলা ভাষায় সব প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
১২. ভাইভা শেষে হাসিমুখে সালাম দিয়ে বের হবেন।
আরও পড়ুনঃ বিসিএস প্রস্তুতিঃ ১৫টি টেকনিকে প্রিলি পাসের প্রস্তুতি
বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির ভাইভা প্রস্তুতি নিয়ে আজকে এই পর্যন্তই। হেলো বিসিএস এর সাথে থাকুন ধন্যবাদ।